তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর? প্রতিদিন তেঁতুল খেলে কি হয়?
তেঁতুল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের সব জায়গায় তেঁতুল পাওয়া যায়। তেতুল এমন একটি ফল যেটি আচার বানিয়ে ও খাওয়া যায়। তেঁতুলের আচার অনেক মজাদার এবং জনপ্রিয় খাবার। তেঁতুলের রয়েছে অনেক উপকারিতা।
"তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর"এই প্রশ্ন অনেকের মনে।
নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে প্রতিদিন তেঁতুল খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।তেঁতুল শুধু কাঁচা,পাকা কিংবা আচার বানিয়ে খাওয়া হয় এমনটি না। তেঁতুল একটি ঔষধি ফল ও বটে । প্রাচীন কাল থেকে তেঁতুল তার ঔষধি গুনের জন্য অন্যতম সেরা। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রতিদিন তেঁতুল খেলে কি হয়?
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর? এমনটা মনে করেন অনেকেই।তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। তেঁতুল যে মানুষের জন্য কতটা উপকারী সেটি একটি পোস্টে লিখে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন তেঁতুল খেলে কি হয়?আসুন আমরা ৫ টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করি।
আরো পড়ুনঃ চালতার চাটনি উপাদান
- হজম শক্তি বৃদ্ধি:প্রথমেই তেঁতুলের যে উপকারিতা না বললেই না সেটি হল হজম শক্তি বৃদ্ধি। তেঁতুল ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পেটের সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে। তেঁতুলে রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, এবং পটাশিয়াম। যা মানুষের হজম শক্তি উন্নত করে।
- গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া: আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েরাই গর্ভাবস্থায় টক-ঝাল খেতে পছন্দ করেন। গর্ভাবস্থায় তেঁতুল হতে পারে আপনার পছন্দের খাবার। তবে সীমিত পরিমানে তেঁতুল খান না হলে হতে পারে আপনার ক্ষতি। তেঁতুলে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই থাকায় শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল ও কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: তেঁতুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তেঁতুলে আলফা অ্যামাইলেজ নামক একটি এনজাইম থাকে যা কার্বোহাইড্রেট শোষণকে ধীর করে দেয় যা অন্যথায় সাধারণ চর্বি এবং ইনসুলিনের বিল্ড আপ এর দিকে পরিচালনা করতে পারে। সেই সাথে ডায়াবেটিসের সাথে যুক্ত অগ্ন্যাশয়ের এর টিস্যুর ক্ষতি কমায়।
- হার্টের উপকারিতা: তেঁতুল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হ্রাস করে। ফলে হার্ট এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- চোখের উপকার: তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি কনজেক্টিভাইটিসের চিকিৎসায় বেশ কাজে লাগে। প্রাচীনকালে যখন এরকম উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না তখন চোখের সমস্যার জন্য মানুষ তেঁতুল ব্যবহার করত।
তেঁতুল খেলে কি রক্ত পানি হয়ে যায়?
তেঁতুল খেলে আমাদের অনেক উপকার হয় তবে বাংলাদেশে একটি কথা প্রচলিত আছে যে তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। আবার অনেকেই ভাবি তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?কথাটি মোটেও সত্য নয় বরং এটি একটি কুসংস্কার। অনেক যুগ আগে থেকে এই কুসংস্কারটি বাংলাদেশে প্রচলিত।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন কতটুকু বিটরুট খাওয়া উচিত?
তেঁতুল খেলে কিংবা তেতুল খাওয়া দেখলে জিভে জল চলে আসে এটিকেই অনেকে ভাবে রক্ত পানি হয়ে চলে আসে। এটি মূলত অসত্য। তেতুলের এন্টিকোয়াগুলেন্ট এবং এন্টিপ্লেটলেট ফাংশান আছে। যার ফলে এটি ব্লাড থিনার হিসাবে কাজ করতে পারে।
অর্থাৎ রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে কিন্তু ঘনত্ব কমিয়ে দেওয়া আর রক্ত পানি করে দেওয়া বিষয়টি এক নয়। তাই তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
তেঁতুল খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়। তবে যদি কিডনির ব্যাপারে বলতে হয় তাহলে পরিমাণ মতো তেঁতুল খেলে কিডনির কোন সমস্যা হয় না। তেঁতুলে ভিটামিন, খনিজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরো বিভিন্ন পুষ্টি রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হল,তেঁতুলে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসি, পটাশিয়াম এবং আইরন সহ অনেক অনেক পুষ্টি রয়েছে যেগুলো কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে যদি কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে তেঁতুলের জুস খাওয়া উচিত হবে না।
কারণ তেতুলের জুসের খাওয়ার ফলে কিডনিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আশা করি এখন আর আমাদের মনে এই প্রশ্ন আসবে না তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে শুধুমাত্র ডায়েট করা কিংবা জিম করায় একমাত্র উপায় নয়। ওজন কমাতে তেঁতুলের শরবত হতে পারে আপনার জন্য উত্তম উপায়। আপনি চাইলে তেঁতুলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। আবার চাইলে এমনি তেঁতুল ও খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ চালতার উপকারিতা
তেতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন প্রশ্নের উত্তর আমরা উপরে আলোচনা করেছি।মোট কথাই তেতুল খেলে আপনার ওজন কমবে কারণ তেঁতুলে হাইড্রক্সিসাইট্রিক এসিড রয়েছে যা শরীরের চর্বি জমতে দেয় না। এই অ্যাসিড সেরোটনিক নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়িয়ে খিদে কমায়।
আর তেঁতুলের শরবত বানাতে চাইলে তার নিয়মাবলী হলো: পরিমাণ মতো পাক তেঁতুল জলে ভিজিয়ে রাখুন।তেঁতুল যখন নরম হয়ে যাবে তখন সেগুলোর ক্বাথ বের করে নিন। এরপর একটি গ্লাসে দু চামচ তেঁতুলের ক্বাথ , শুকনো লঙ্কার গুড়া, বিট লবণ এবং এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে পারেন। সাথে বরফ আর পুদিনা পাতা দিলে আরো ভালো হয়।
তেঁতুল কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
তেঁতুল মানব শরীরের জন্য অনেক উপকার করলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ক্ষতিকর ঠিক বললে ভুল হবে। বিষয়টিকে আমরা বলতে পারি অতিরিক্ত খাওয়ার পরিণাম। অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে মানব দেহের শরীরে পিত্তথলিতে সমস্যা হয়।
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর, এখানেও বলা যেতে পারে অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া মোটা উচিত না।এই সমস্যা থেকে অনেকের পিত্তথলিতে পাথর হতে সাহায্য করে। এছাড়াও অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে জন্ডিসের মত অসুখ হতে পারে। কারণ তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। এজন্য তেঁতুল কম পরিমাণে খাওয়ায় ভালো।
শেষ কথা
তেঁতুল মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও এটি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক না। কারণ এটির যেমন উপকার রয়েছে তেমনি এটির ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ক্ষতিকর দিক কম হলেও যেহেতু সেটা ক্ষতিকর তাই সে বিষয়ে আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের শেয়ার করে জানিয়ে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url