বৃষ্টির পানির অপকারিতা - বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে?
বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। কথাটি আসলে অনেকটাই সঠিক। বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। বৃষ্টির পানি অনেক ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ হলেও বৃষ্টির পানির অপকারিতা রয়েছে। আমরা আজকে জানবো বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে। এজন্য আমার এই লেখাটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
বৃষ্টির পানির অপকারিতা অনেক সময় বড় ক্ষতির কারণ হয়। আমরা জানি প্রাকৃতিকভাবে যে পানি আমরা পাই সেটি সব সময় বিশুদ্ধ নাও হতে পারে। পানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যকতা রয়েছে।
ভূমিকা: পানি আমাদের জীবন বাঁচায়, প্রতিদিন একটা মানুষের কমপক্ষে ২ লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। বৃষ্টির পানির অপকারিতা কথা পানি পান করা থেকে বিরত থাকি। আসুন কথা না বাড়িয়ে বৃষ্টির পানির অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে নিচে জেনে নিই,সাথে আরও জানবো বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে।
পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন কোনটি
বৃষ্টির পানির অপকারিতা যখন মানুষের মাথায় আসে তখন তারা ভাবে নিশ্চিত! পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলি আমাদের শরীরে সহজে শোষিত হয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তাই এগুলি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য থেকে নিয়মিতভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন । পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলি হল:
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স:
এই গ্রুপে কয়েকটি ভিটামিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা আছে:
- ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)**: শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন।
- ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন)**: কোষের বৃদ্ধি এবং শক্তি উৎপাদনের জন্য সহায়ক।
- ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)**: হজম এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
- ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)**: হরমোন উৎপাদন এবং শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
- ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন)**: প্রোটিন বিপাক এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন)**: চুল, ত্বক, এবং নখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।
- ভিটামিন বি৯ (ফোলিক অ্যাসিড)**: ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং কোষের বিভাজনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন)**: রক্ত এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
- ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড):
আরো পড়ুনঃ লেবুর শরবত খেলে কি হয়
বৃষ্টির পানির অপকারিতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বিপদে ফেলতে পারে। ভিটামিন-সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও এটি ত্বক, হাড়, এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই ভিটামিনগুলি সহজেই পানিতে দ্রবণীয় হয় এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু এরা শরীরে জমা থাকে না, তাই নিয়মিত খাদ্য থেকে এদের পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে
বৃষ্টির পানি সাধারণত বিশুদ্ধ হলেও বৃষ্টির পানির অপকারিতা রয়েছে।বৃষ্টির পানিতে সাধারণত কোনো ভিটামিন থাকে না। বৃষ্টির পানি প্রধানত বাষ্পীভূত হওয়া জলীয় বাষ্প থেকে তৈরি হয়, যা বায়ুমণ্ডলে ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে এবং পরে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভিটামিন সংযোজিত হয় না।
তবে, বৃষ্টির পানি খুবই বিশুদ্ধ হতে পারে এবং এতে কিছু পরিমাণে খনিজ পদার্থ থাকতে পারে যদি বায়ুমণ্ডলে এসব খনিজ উপস্থিত থাকে। কিন্তু ভিটামিন, যা জৈব যৌগ এবং সাধারণত জীবিত জীব দ্বারা উৎপাদিত হয়, বৃষ্টির পানিতে পাওয়া যায় না।
বৃষ্টির পানির উপকারিতা
বৃষ্টির পানির অপকারিতা রয়েছে। তবে বৃষ্টির পানির উপকারিতা অনেক, বিশেষ করে যখন এটি পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত হয়। এখানে বৃষ্টির পানির কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
১. প্রাকৃতিক জল সরবরাহ:
- জলাধার পূরণ**: বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ জলাধার, পুকুর, নদী ও হ্রদে পূর্ণ করে, যা পানির প্রাকৃতিক সরবরাহ নিশ্চিত করে।
- বৃষ্টির পানি সংগ্রহ**: বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা হয় এবং পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুনঃ রাতে লেবু খেলে কি হয়
২. উদ্ভিদ ও কৃষির জন্য উপকারী:
- সেচের জন্য**: কৃষিকাজের জন্য প্রাকৃতিকভাবে সেচ প্রদান করে, যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক।
- মাটি পুষ্টি**: বৃষ্টির পানি মাটির পুষ্টি বজায় রাখতে সহায়ক এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান সরবরাহ করে।
- দূষণ হ্রাস**: বৃষ্টির পানি বায়ু এবং মাটির দূষণ কমাতে সাহায্য করে। এটি বায়ুতে থাকা ধুলিকণা ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থকে পরিষ্কার করে।
- গাছপালা ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণ**: গাছপালা ও বনজ সম্পদকে তাজা রাখে এবং স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
৪. অর্থনৈতিক সাশ্রয়:
- জল সঞ্চয়**: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করলে শহরের বা গ্রামীণ এলাকায় পানির জন্য নির্ভরতা কমে, যা অর্থনৈতিক সাশ্রয়ে সহায়ক।
- উদ্যান ও ল্যান্ডস্কেপিং**: বৃষ্টির পানি উদ্যান ও ল্যান্ডস্কেপিং কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়, যা গৃহস্থালী ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পানির বিল কমায়।
৫. বিশুদ্ধতা:
- প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা**: বৃষ্টির পানি সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ হয়, যেহেতু এটি বাষ্পীভূত হওয়া জল থেকে আসে। তবে, বায়ু দূষণ বেশি থাকলে বৃষ্টির পানি দূষিত হতে পারে।
৬. পুনর্নবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ:
- পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস**: বৃষ্টির পানি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ, যা নিয়মিত চক্রের মাধ্যমে পুনরায় প্রাপ্ত হয়।
উপরে আমরা বৃষ্টির পানি উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। আমরা বৃষ্টির পানির অপকারিতা সম্পর্কেও একটু পরে জানব। বৃষ্টির পানিপ্রাকৃতিকভাবে আমাদের জীবন ও পরিবেশে বিভিন্ন উপকার বয়ে আনে, তবে এটি ব্যবহারের আগে বিশুদ্ধতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত, বিশেষ করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
আরো পড়ুনঃ কমলা ফলের উপকারিতা
বৃষ্টির পানির অপকারিতা
বৃষ্টির পানির উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি বৃষ্টির পানির অপকারিতা ও রয়েছে।বৃষ্টির পানির অপকারিতা হতে পারে কিছু পরিস্থিতি ও সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। এটি সাধারণত দূষিত হলে হতে পারে এবং কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে:
জলাবদ্ধতা ও জলমণ্ডলীয় সমস্যা**: বৃষ্টির পানি যদি দূষিত হয়ে থাকে, তবে এটি জলাবদ্ধতা এবং জলমণ্ডলীয় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পানির জন্য কম্পানিগুলি ও মৎস্যজীবন্ত জীবজন্তুদের মৃত্যু।
- স্বাস্থ্য সমস্যা**: বৃষ্টির পানি দূষিত হলে মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, যেমন পানির জন্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পরিবেশের বিপর্যয়**: বৃষ্টির পানির দূষণ পরিবেশের অবস্থানের ধ্বংসের কারণ হতে পারে, যেমন নদী, হ্রদ, ও অন্যান্য জলাশয়ের মৃত্যু।
- প্রাকৃতিক বায়ুসঞ্চার**: বৃষ্টির পানির দূষণ বায়ুমণ্ডল ও অতিরিক্ত বিষাক্ত বায়ুতে মিশে যেতে পারে, যা প্রাকৃতিক বায়ুসঞ্চারে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- সংক্রামক অসুখ**: দূষিত বৃষ্টির পানির পরিণামে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক অসুখ ছড়াতে পারে, যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, অ্যামেবিক ডায়রিয়া, কৃমি ইঞ্জেকশন ইত্যাদি।
এই কারণে, পানিকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং পরিষ্কার করার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়াও, পর্যবেক্ষণ এবং বায়ু এবং পানিতে মিশে থাকা যেকোনো দূষণ প্রতিরোধের জন্য প্রাকৃতিক সংসাধন ব্যবহার করা উচিত।
বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে
বৃষ্টির পানিতে সাধারণত এসিড থাকে না। বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বায়ু থেকে সংগৃহীত জলীয় বাষ্প হিসেবে উপস্থিত থাকে, যা পানির pH মান নির্ধারণ করে। সাধারণত বৃষ্টির পানির pH মান ৫.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকে, যা প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত হয়।
বিশেষ ক্ষেত্রে যখন বিভিন্ন অচিন্তিত বা সাংক্রামক পদার্থগুলির প্রভাবে বৃষ্টির পানি দূষিত হয়, তখন পানিতে এসিড বা অ্যালকালি সহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যেতে পারে। এসিড যেমন নিচের কিছু ধরণের হতে পারে:
- কার্বনিক এসিড**: এটি বৃষ্টির পানির অস্তিত্বের কারণে হতে পারে, যা কার্বন ডাইঅক্সাইডের পানিতে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলাফল।
- সালফুরিক এসিড**: এটি বৃষ্টির পানি দূষণের ফলাফল হতে পারে, যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক একটি রাসায়নিক পদার্থ।
এসিড বৃষ্টির কারণ ও ফলাফল
এসিড বৃষ্টির পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সমস্যাপূর্ণ বিষয় যা পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এই পরিস্থিতির সম্ভাব্য কারণ এবং তার ফলাফল সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থেকে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি:
কারণ:
- উচ্চ জৈবশীতে এসিড**: প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বা প্রযুক্তি যেমন বায়ুর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া পানিতে এসিড উৎপন্ন করতে পারে।
- প্রকৃতির বা মানব উত্সের প্রতিক্রিয়া**: উদাহরণস্বরূপ, কোয়ারি কারখানা, গাড়ির ইঞ্জিন, ধূমপান ইত্যাদি থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এসিড উৎপন্ন হতে পারে।
- প্রাকৃতিক ক্যালামিটি**: প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে যেমন ভূমিকম্প, ভুমি স্ফোট ইত্যাদি এসিড বৃষ্টির কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ চালতার চাটনি উপাদান
ফলাফল:
- পরিবেশের অস্থিরতা**: এসিড বৃষ্টি পরিবেশের অস্থিরতা ও অপচয়ের কারণ হতে পারে।
- পানিতে জৈববৈচিত্র্যের নষ্টতা**: এসিড বৃষ্টি পানিতে রয়েছে সমান্তরাল ও স্থায়ী পানির বাদামি মাধ্যমে জৈববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে।
- মানব স্বাস্থ্য প্রভাব**: যদি এসিড বৃষ্টির ফলে পানি দূষিত হয়, তবে এটি মানব স্বাস্থ্য এবং উদ্ভাবিত হতে পারে একটি ভাইরাস বা অন্য পানি সংক্রামক রোগের ঝুঁকি অর্থাৎ নিউমোনিয়া
বৃষ্টির জলের পিএইচ এর মান কত?
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা
বৃষ্টির পানির অপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি।বৃষ্টির জলের পিএইচ সাধারণত ৫.০ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে থাকে। এটি সামান্য অম্লীয় হয় কারণ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড পানির সাথে মিশে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। তবে, যদি দূষণ বেশি থাকে, বিশেষ করে সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো দূষক, তখন বৃষ্টির জল আরও বেশি অম্লীয় হয়ে যেতে পারে, এবং পিএইচ এর মান ৪.০ এর নিচেও নেমে যেতে পারে, যাকে এসিড বৃষ্টি বলা হয়।
শেষ কথা
উপরের লেখাগুলো থেকে আমরা এইটা জানতে পারলাম যে বৃষ্টির পানির অপকারিতা থাকলেও তার উপকারিতা অনেক বেশি। এজন্য আমরা অনায়াসেই বৃষ্টির পানি পান করতে পারি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বৃষ্টির পানি পান করতে ভয় পেলেও এটি আমাদের কোন ক্ষতি করে না।
উপরের লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে এবং আপনার উপকারে আসে তাহলে আপনার পরিচিতজনদের শেয়ার করে জানিয়ে দিন। নিজে সুস্থ থাকুন বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url