সেভেন সিস্টার্স মানে কি - সেভেন সিস্টার্স ম্যাপ
২০২৪ সালে ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেভেন সিস্টার্স বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আসুন জেনে নি ই সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং সেভেন সিস্টার্স ম্যাপ সম্পর্কে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ভাইরাল একটি টপিক হল সেভেন সিস্টার্স নিয়ে। আমার এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং এর বিস্তারিত।
ভূমিকা
ভারতের মোট রাজ্য ২৮ টি এবং ভারতের কেন্দ্রে শাসিত রাজ্য পাঁচটি। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য রয়েছে। এই সাতটি রাজ্যের মধ্যে চারটি রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমানা সংযোগ রয়েছে। এগুলি হল আসাম,মেঘালয়,মিজোরাম ও ত্রিপুরা। আমরা আজকে জানবো সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কে বিস্তারিত।
সেভেন সিস্টার্স বাংলাদেশের কোন দিকে
সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং সেভেন সিস্টার্স বাংলাদেশের কোন দিকে অবস্থিত এ বিষয়ে যদি আপনি জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক আর্টিকেলটি পড়ছেন। দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৃহত্তম দেশ হল ভারত। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ হল ভারত। ভারতের সীমান্তের চারিদিকে সর্বমোট সাতটি দেশ রয়েছে। দেশ গুলো হল:
- বাংলাদেশ
- পাকিস্তান
- নেপাল
- মিয়ানমার
- ভুটান
- আফগানিস্তান
- চীন
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত ব্রিটিশদের শাসন থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা লাভ করে। সেভেন সিস্টার্স মানে কি একটু পরে আমরা সেটি জানবো। সেভেন সিস্টার্স বা ইন্ডিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য বাংলাদেশের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই সাতটি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা মেঘালয় আসাম এবং মিজোরামের সাথে বাংলাদেশের সীমানা সরাসরি সংযুক্ত রয়েছে।
সেভেন সিস্টার্স কেন বলা হয়
সেভেন সিস্টার্স কেন বলা হয় আপনারা অনেকেই সে বিষয়ে জানতে আগ্রহী। সেভেন সিস্টার্স মানে কি এটি ও আপনারা অনেকেই জানতে চান। সেভেন সিস্টার্স বলা হয় ভারতের সাতটি রাজ্যকে যেটি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এই সাতটি রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিকতার দিক দিয়ে একে অপরের সঙ্গে অনেক সম্পর্কিত।
আরো পড়ুনঃ সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
এই সাতটি রাজ্য একসাথে একটি পৃথক অঞ্চলের মতো দেখায় যেখানে তাদের মত ঐক্য ও পারস্পরিক নির্ভরতা সুদৃঢ়। এছাড়াও এই সাতটি অঞ্চল ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা রয়েছে যার কারণে তাদেরকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। সেভেন সিস্টার্স মানে কি সে বিষয়ে আমরা আরেকটু পরে জানতে পারবো।
সেভেন সিস্টার্স মনে রাখার কৌশল
সেভেন সিস্টার্স মনে রাখার কয়েকটি নিনজা টেকনিক রয়েছে। সেভেন সিস্টার্স মানে কি এইটা জানার সঙ্গে সঙ্গে সেভেন সিস্টার্স মনে রাখার কৌশল জেনে নিন।
কৌশল: আমি অমেত্রি মনা
- আ=আসাম (রাজধানী গোয়াহাটি)
- মি=মিজোরাম (রাজধানী আইজল)
- অ=অরুনাচল (রাজধানী ইন্দিরাগিরি)
- মে=মেঘালয় (রাজধানী শিলিং)
- ত্রি=ত্রিপুরা (রাজধানী আগরতলা)
- ম=মনিপুর (রাজধানী ইম্ফল)
- না=নাগাল্যান্ড (রাজধানী কোহিমা)
সেভেন সিস্টার্স মানে কি পরের হেডিং এ আমরা জানতে পারবো।সেভেন সিস্টার্স অর্থাৎ সাতটি রাজ্য মনে রাখার কৌশল আপনাকে জানিয়ে দিলাম আশা করি এখন থেকে সাতটি রাজ্য মনে রাখতে আপনার কষ্ট হবে না।
সেভেন সিস্টার্স মানে কি
আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর দিতে চলে এসেছি। সেভেন সিস্টার্স মানে কি জানার জন্য আপনি অনেকক্ষণ থেকেই অপেক্ষা করছেন। আসলে ভারতের সাতটি রাজ্য যাদেরকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। এই সাতটি রাজ্য হল
- অরুণাচল প্রদেশ
- আসাম
- মনিপুর
- মেঘালয়
- মিজোরাম
- নাগাল্যান্ড
- ত্রিপুরা
আসুন সেভেন সিস্টার্স মানে কি এটির জানার পাশাপাশি আমরা ভারতের এই সাতটি রাজ্যের সম্পর্কে টুকটাক জেনে নিই।
১) অরুণাচল প্রদেশ : অরুণাচল প্রদেশ এর পূর্ব দিকে চীনের তিব্বত, পশ্চিম দিকে ভুটান, দক্ষিণ দিকে আসাম এবং দক্ষিণ পূর্বে নাগাল্যান্ডের সাথে সীমানা ভাগ রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ এর রাজধানী ইটানগর। অরুণাচল প্রদেশে বহু ভাষা প্রচলিত যার মধ্যে বেশিরভাগই তিব্বতীয়, বর্মী এবং চীনা ভাষা থেকে উদ্ভূত।
এখানকার জনগণের বেশিরভাগই বিভিন্ন ধর্ম অনুসরণ করে তবে হিন্দু বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বীও রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এখানকার কৃষকেরা ধান ভুট্টা আলু সহ যাবতীয় কৃষিজ আবাদ করে থাকেন। অরুণাচল প্রদেশে বিশাল বনভূমি রয়েছে যা এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখানকার বাশ, কাঠ এবং অন্যান্য বনজ পণ্য রপ্তানি করা হয়।এছাড়াও অরুণাচল প্রদেশের অনেক উপজাতি তাদের হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত যা তাদের সাংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে রয়েছে। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানকার রাস্তাঘাট অতটা উন্নত না এখানকার ভৌগোলিক পরিচিতির কারণে পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্ন প্রকৃতির।
অরুণাচল প্রদেশে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। যেমন লোসার, সাংল্যান্ড, মুপিন এবং সোলুং । এগুলি উৎসব এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কে ধারণ করে। সেভেন সিস্টার্স মানে কি নিশ্চয়ই আস্তে আস্তে আপনি বুঝতে পারতেছেন।
২) আসাম: আসামের ভৌগলিক অবস্থা বলতে গেলে বলতে হয় আসামের উত্তরে অরুণাচল প্রদেশ, পূর্বে নাগাল্যান্ড ও মনিপুর, দক্ষিনে মিজোরাম ও ত্রিপুরা, পশ্চিমে মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ, এবং উত্তর পশ্চিমে ভুটান ও বাংলাদেশের সাথে সীমানা প্রাচীর রয়েছে। আসামের রাজধানী দিসপুর। আসামের মানুষের প্রধান ভাষা আসামীয়া এবং এটি তাদের রাজ্যের সরকারি ভাষা।
এছাড়াও বাংলা, মিজো,বোড়ো এবং হিন্দি বাঁচাও প্রচলিত রয়েছে। আসামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তবে মুসলিম খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীও রয়েছে। আসামে বিভিন্ন জাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করার ফলে এদের সাংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। বিহু আসামের প্রধান উৎসব যা ফসল কাটার সময় উদযাপন করা হয়।
যেমনটি বাংলাদেশের অনেক গ্রামের মানুষ ও করে থাকেন। আসাম ভারতের বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী রাজ্য এবং আসামের চা বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হওয়ায় এটি রাজ্যের প্রধান অর্থনৈতিক উপাদান। এছাড়াও আসামে প্রচুর পরিমাণে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে যা রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চা ছাড়াও আসামে ধান, গম, আখ এবং সরিষা প্রধান কৃষি পণ্য হিসেবে কৃষকেরা উৎপাদন করে থাকেন। আসামে পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো এখানে সড়ক পথ রেলপথ এবং বিমানবন্দর সবকিছুই রয়েছে। সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং এর রাজ্য গুলো সম্পর্কে আমরা আস্তে আস্তে জানছি।
৩) মনিপুর: মনিপুর রাজ্যের উত্তরে নাগাল্যান্ড, দক্ষিনে মিজোরাম, পশ্চিমে আসাম এবং পূর্বে মায়ানমার এর সীমানা রয়েছে। মনিপুরের রাজধানী হল ইম্ফল যা মনিপুরের প্রধান শহর এবং রাজ্যের প্রশাসনিক সকল কাজ এখান থেকে পরিচালিত হয়। মনিপুরের মানুষের প্রধান ভাষা মৈতৈলোন বা মণিপুরী। মনিপুরী ভাষা ভারতের সংবিধানে অষ্টম তফসিলে শিক্ষিত একটি ভাষা।
এছাড়াও এখানে বিভিন্ন উপজাতি ভাষাও প্রচলিত। মনিপুরের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী , তবে খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীও এখানে রয়েছে। মনিপুরের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই প্রথাগত ধর্ম পালন করে থাকেন। মনিপুর তার সংস্কৃতি ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।
মনিপুর রাজ্যটি মনিপুরি নৃত্য শিল্প এবং থাং-টা মার্শাল আর্টের জন্য সুপরিচিত এখানকার বিখ্যাত উৎসব গুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়াওশাং, চিরাউবা এবং কাং। মনিপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। মনিপুরের প্রধান ফসল ধান এবং এটি রাজ্যের খাদ্য সরবরাহের মূল উপাদান। এছাড়াও এখানকার মানুষ শাক-সবজি তেল বী জ ও তামাক চাষ করে থাকেন।
এখানকার কিছু কিছু মানুষ হস্তশিল্পের কাজ করে থাকেন। এখানকার বোনা কাপড় বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র বিশ্বজুড়ে অতি পরিচিত। মনিপুর সড়ক পথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে সংযুক্ত জাতীয় ও রাজ্য স্বরূপ গুলি মনিপুরের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এছাড়াও মনে পড়ে রেলপথ ও বিমানবন্দর রয়েছে। আপনারা এখন জানছেন সেভেন সিস্টার্স মানে কি।
৪)মেঘালয়: মেঘালয় রাজ্যের উত্তরে আসাম, দক্ষিনে মিজোরাম, পূর্বে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সাথে সীমানা ভাগ করা রয়েছে। মেঘালয়ের রাজধানীর নাম শিলং। শিলং মেঘালয়ের প্রধান শহর এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ১৯২০ সালে মেঘালয় ব্রিটিশ ভারতের আসাম রাজ্যের একটি অংশ ছিল।
মেঘালয়ের মানুষের প্রধান ভাষা গুলি হল খাসি,জৈন্তিয়া, এবং গারো। এছাড়াও ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার লোকজন এখানে রয়েছে। মেঘালয়ের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। বিশেষত ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট এছাড়াও হিন্দু মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মীয় লোকজন এখানে বসবাস করেন। মেঘালয়ের তিনটি প্রধান উপজাতি গোষ্ঠী রয়েছে এরা হলো খাসি গারো এবং জৈন্তিয়া।
এই মানুষগুলির নিজস্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ উৎসব এবং পোশাক রয়েছে। এখানকার জনপ্রিয় উৎসবগুলির মধ্যে রয়েছে বোহা, উনলং এবং ডোগু। মেঘালয় পাহাড়ি অঞ্চল এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীদের দেখা যায়। মেঘালয় রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক । প্রধান কৃষি পণ্য গুলির মধ্যে ধান, আদা, হলুদ এবং শাকসবজি অন্যতম।
মেঘালয় রাজ্যের হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক বিশেষভাবে পরিচিত। মেঘালয়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মেঘালয়ের পর্যটন কেন্দ্র। রাজ্যটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর হওয়ায় এখানে পর্যটকের ভিড় সবসময় লেগেই থাকে। এখানকার সড়ক পথ তবে রেলপথ অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্তি নয়।
আরো পড়ুনঃকি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে
শিলিং এবং অন্যান্য শহরের কাছে কিছু দূরত্বে রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। আমরা এখন জানছি সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং এর রাজ্য গুলো সম্পর্কে।
৫) মিজোরাম: মিজোরামের উত্তরে আসাম, পশ্চিমে মনিপুর এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সাথে সীমানা ভাগ করা রয়েছে। আইজল হল মিজোরামের রাজধানী এবং প্রধান শহর। এই শহর থেকে ই রাজ্যের প্রশাসনিক কাজ এবং বাণিজ্যিক ব্যাপার গুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। মিজোরাম ১৯ ৮৭ সালে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয় এর আগে এটি একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছিল।
মিজোরামের প্রধান ভাষা মিজোলাং এবং এটি রাজ্যের সরকারি ভাষা। এছাড়াও ইংরেজি হিন্দি এবং বিভিন্ন উপজাতির ভাষাও এ রাজ্যে প্রচলিত। মিজোরামের অধিকাংশ জনগণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এখানে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মৈর প্রধান আধিপত্য রয়েছে তবে হিন্দু মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপস্থিতিও হয়েছে। এই রাজ্যের জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী।
মিজোরামের নৃত্য শিল্প, গান এবং পোশাক সারাদেশে পরিচিত। রাজনীতিতে অনেক রকম উৎসব পালন করা হয় যেমন পবাল লেং, চাম্পাই এবং কোলাস কোলকো মেলা । মেজোরামের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এখানকার কৃষকেরা প্রধানত ধান, তাম, হলুদ, আদা এবং শাক সবজি উৎপাদন করে থাকেন।
এছাড়াও মিজোরামের হস্তশিল্প বিশেষভাবে পরিচিত যার মধ্যে মিজো পোশাক, মৃত শিল্প এবং কারুকার্য অন্তর্ভুক্ত। মিজোরামের সড়ক পথ অত্যন্ত ভালো। এখানে জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়ক রয়েছে যা বিভিন্ন শহর ও গ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন করে তবে মিজোরামে সরাসরি রেল সংযোগ নেই। তবে আশেপাশের রাজ্য গুলোর মাধ্যমে এখানে রেলপথে পৌঁছানো সম্ভব।
তবে বিমানবন্দর রয়েছে যার ফলে রাজ্যের বাইরে থেকে সরাসরি মিজোরামে প্রবেশ করা যায়। সেভেন সিস্টার্স মানে কি সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত আমরা জেনেই চলেছি।
৬) নাগাল্যান্ড: নাগাল্যান্ড রাজ্যের উত্তরে আসাম, দক্ষিণে মনিপুর, পশ্চিমে মেঘালয়, এবং পূর্বে মায়ানমারের সাথে সীমানা ভাগ করা রয়েছে। নাগাল্যান্ডের রাজধানীর নাম কোহিমা। কোহিমা নাগাল্যান্ডের প্রধান শহর এবং রাজ্যের প্রশাসনিক সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক সকল কিছু এখান থেকে পরিচালিত হয়। ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এর পূর্বে এটি আসামের সাথে সংযুক্ত ছিল।
নাগাল্যান্ডের জনগণের প্রধান ভাষা হল ইংরেজি এবং এটি এই রাজ্যের সরকারি ভাষা। এছাড়াও নাগা ভাষা এবং বিভিন্ন উপজাতি ভাষা যেমন কুকি, আচি এবং সুমি ভাষার প্রচলন রয়েছে। নাগাল্যান্ডের অধিকাংশ জনগণই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তবে কিছু হিন্দু মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মীয় গুষ্টির মানুষ যেন এখানে বসবাস করেন। নাগাল্যান্ডের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অসাধারণ।
এখানে ১৬ টি প্রধান উপজাতিগোষ্ঠীর বসবাস প্রতিটি গুষ্টির নিজস্ব সাংস্কৃতিক ,ঐতিহ্য ,পোশাক এবং উৎসব রয়েছে। নাগাল্যান্ডের প্রধান উৎসব গুলোর মধ্যে রয়েছে হুজা, এনচুং এবং এবেন। নাগাল্যান্ডের অর্থনীতি মূলত নির্ভর করে কৃষির উপর। এখানে উৎপাদিত ফসল গুলোর মধ্যে রয়েছে ধান, আখ, মিষ্টি আলু এবং শাক সবজি। এছাড়াও নাগাল্যান্ডের হস্তশিল্প বিশেষভাবে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃকি খাবার খেলে ওজন বাড়ে?
হস্তশিল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে বোনা কাপড়, বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র এবং কাঠের খোদাই করা জিনিসপত্র। নাগাল্যান্ডের সড়ক ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত। নাগাল্যান্ডে সরাসরি রেলপথ সংযোগ নেই তবে আশেপাশের রাজ্য গুলোর মাধ্যমে রেলপথে পৌঁছানো সম্ভব।
তবে ডিমাপুর বিমানবন্দর নাগাল্যান্ডের প্রধান বিমানবন্দর রাজ্যের বাইরে থেকে সরাসরি এই রাজ্যে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে বিমান পথে তাকে এই বিমানবন্দর এই নামতে হবে। সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং এর সাতটি রাজ্যের মধ্যে ছয়টি রাজ্যে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নিলাম এখন সর্বশেষ রাজ্য সম্পর্কে জানব।
৭) ত্রিপুরা: ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তরে মিজোরাম ও আসাম, দক্ষিনে বাংলাদেশ, পূর্বে মিজোরাম এবং পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের সাথে সীমানা ভাগ করা রয়েছে। আগরতলা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী এবং আগরতলায় ত্রিপুরার প্রধান শহর। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ত্রিপুরা একটি রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং 1963 সালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয়।
ত্রিপুরা মানুষের প্রধান ভাষা হল বাংলা এবং এই বাংলায় তাদের সরকারি ভাষা। এছাড়াও ত্রিপুরী ভাষায় অনেকেই কথা বলে থাকেন। এবং আরো কিছু ভাষার মানুষ এখানে বসবাস করে যেমন জমাতিয়া, চাকমা এবং হালামও ব্যবহৃত হয়। ত্রিপুরার মানুষের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
তবে এখানে খ্রিস্টান মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মীয় মানুষজনও রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান পাহাড়ি এবং ঘন অরণ্য পর্ণ হওয়ায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এখানে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, তামাক, সিমলা মরিচ, এবং শাকসবজি।
ত্রিপুরা রাজ্যের হস্তশিল্প সারাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত। ত্রিপুরী কাপড়, বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র এবং মৃৎশিল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরার সড়ক ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো। ত্রিপুরা রাজ্য রেলপথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত। সেভেন সিস্টার্স মানে কি এখন আপনারা নিশ্চয় পরিষ্কারভাবে সেটি বুঝতে পেরেছেন।
সেভেন সিস্টার্স আয়তন
সেভেন সিস্টার্স এর আয়তন সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আমরা উপরে জেনেছি সেভেন সিস্টার্স মানে কি এখন আমরা জানবো সেভেন সিস্টার্স এর আয়তন সম্পর্কে।
অরুনাচল প্রদেশ: এই প্রদেশের ক্ষেত্রফল প্রায় ৮৩৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার, যা এটিকে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য গুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
- আসাম : আসাম এর ক্ষেত্রফল প্রায় ৭৮ হাজার ৪৪৩ বর্গ কিলোমিটার।
- মনিপুর: মনিপুর এর ক্ষেত্রফল প্রায় ২২ হাজার ৩২৭ বর্গ কিলোমিটার। যা এটিকে ভারতের ছোট রাজ্যগুলির একটি করে তুলেছে।
- মেঘালয়: মেঘালয় এর ক্ষেত্রফল প্রায় ২২ হাজার ৪৮১ বর্গ কিলোমিটার।
- মিজোরাম: মিজোরাম প্রদেশের ক্ষেত্রফল প্রায় ২১ হাজার ৮৮৭ বর্গ কিলোমিটার।
- নাগাল্যান্ড: নাগাল্যান্ড এর ক্ষেত্রে ফল প্রায় ১৬ হাজার ৫৭৯ বর্গ কিলোমিটার। যেটি ভারতের রাজ্য গুলোর মধ্যে অনেক ছোট রাজ্যের কাতারে পড়ে।
- ত্রিপুরা: ত্রিপুরা রাজ্যের ক্ষেত্রফল মাত্র ১০ হাজার ৫০৭ বর্গ কিলোমিটার।
সেভেন সিস্টার্স ম্যাপ
সেভেন সিস্টার্স মানে কি এবং সিস্টার্স ম্যাপ সম্পর্কে অনেকেরই জানার আগ্রহ রয়েছে। আসুন আর দেরি না করে দেখে নিন সেভেন সিস্টার্স এর ম্যাপ।
শেষ কথা
ভারত পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম একটি দেশ। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর হলেও বাকি সব দিকে ই ভারত এর সীমানা রয়েছে। আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন সেভেন সিস্টার্স মানে কি আশা করি আপনাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানাতে পেরেছি।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন এবং এরকম অথেন্টিক কোন কিছু জানার প্রয়োজনে আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url