ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব - অতিরিক্ত ঘাম হলে কি করবেন
আমরা বেশিরভাগ মানুষই মনে করি ঘাম একটি খারাপ ও অপরিষ্কার জিনিস। তবে এটি শুধু
ক্ষতি করে এরকম না। আপনারা অনেকেই জানতে চান ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব।
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে ঘাম বিষয়ে পরিষ্কারভাবে সবকিছু জানাবো। আমি
আরো জানাবো অতিরিক্ত ঘাম হলে কি করবেন সে সম্পর্কেও।
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের একটু থেকেই শরীর ঘেমে যায়। শুধু শরীর না
অনেকের হাত পায়ের তালু পর্যন্ত ঘেমে যায়। এটি অনেকের কাছে অস্বস্তির বিষয়। তবে
বিচলিত হওয়ার কারণ নেই।
ভূমিকা
ঘাম মানুষের শরীরের স্বাভাবিক একটি ক্রিয়া। এটি মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ
প্রক্রিয়া। অনেকেই ঘামকে অস্বস্তির কারণ হিসেবে মনে করে থাকলেও ঘামের বিভিন্ন
উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চান
তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক ইসলামে ঘামের
বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
ঘামের অর্থ ও গুরুত্ব
ঘাম শব্দের অর্থ এসে দাঁড়ায় স্রোত বা নিঃসরণ। পারিভাষিক ভাষায় বলতে গেলে বলা
যায় যে কোন ভারী বা জটিল কাজ সম্পন্ন করার সময় শরীরের কুপের গোড়া দিয়ে যে
লবণাক্ত তরল পদার্থ বের হয় তাকে ঘাম বলে। ঘাম শরীর থেকে নিঃসৃত হয়।
আরো পড়ুনঃ
মস্তিষ্কের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ঘাম মূলত একটি গন্ধহীন তরল। তবে ঘামের বন্ধ হওয়ার কারণ হল গুটিকয়েক
ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে থাকে৷ শরীরের কিছু কিছু অঙ্গে ঘাম
মিশ্রনের সাথে সাথে তরল চর্বি ফ্যাটি এসিড ও লবণ বের হয়ে আসে এইগুলো এপোক্রাইন
গ্রন্থির সাথে মিশে ঘামকে দুর্গন্ধ যুক্ত গড়ে তোলে।
আমাদের শরীরে ঘামের গুরুত্ব অপরিসীম। ঘাম সাধারণত আমাদের শরীরের ভারসাম্য , পানি
ভারসাম্য ও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে এবং
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারে। এই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন
ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত।
ঘামের উপকারিতা
ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আমি আপনাকে জানাবো
ঘামের উপকারিতা। আমরা আগেও জেনেছি ঘাম আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। অনেকে ওই ঘামকে অস্বস্তিকর মনে করে কিন্তু এতে কিছু উপকার ও রয়েছে
,চলুন আপনাকে তা সম্পর্কে জানাই
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণঃ আমরা অত্যাতিক গরমে কোন কাজ করলে বা খেলাধুলা করলে
আমরা অনেক সময় ঘর্মাক্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘাম অনেকের কাছে অস্বস্তি মনে হলেও
এই ঘাম আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘাম পঞ্চীভূত হয়ে বাষ্প তৈরি করে আমাদের শরীরকে শীতল করে রাখে । শরীর যেন গরম না
হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রা অবস্থান করে এটি নিয়ন্ত্রণ করে ঘাম।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ লক্ষ্য করলে দেখা যায় সাধারণত মোটা মানুষদের ঘাম
বেশি হয়ে থাকে। মোটা মানুষদের শারীরিক পরিশ্রমের ফলে ঘাম বের হয় এবং এই ঘামের
সাথে অনেক ক্যালরি সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ মানুষ বেশিরভাগ সময় চিন্তিত থাকলে তার শরীর ঘর্মাক্ত
হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন শরীরের এই ঘাম বের হওয়ার মাধ্যমেও
কিছুটা মানসিক চাপ কমে যায়।
ত্বকের যত্নঃ সাধারণত ঘামের মাধ্যমে শরীরের সমস্ত লোমকুপ গুলো ক্লিয়ার
হয়ে যায়।আমরা জানি সাধারনত ঘাম ত্বকে ব্রণ ও বিভিন্ন ধরনের এলার্জি তৈরিতে কাজ
করে কিন্তু এই ঘাম বের হওয়ার মাধ্যমে কূপের মধ্যে দিয়ে অনেক রকম বিষাক্ত
তৈলাক্ত পদার্থ বের হয়ে শরীরের কোষ গুলোকে সুস্থ রাখে।
আমি আপনাকে ঘামের উপকারিতা সম্পর্কে জানালাম। একটু পরে আপনাকে জানাবো ইসলামে
ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে। চলুন তার আগে ঘামের অপকারিতা আপনাকে জানাই।
ঘামের অপকারিতা
আমরা জানি সকল কিছুরই উপকারিতা ও অপকারিতা এই দুইটা দিকই হয়েছে ,এতক্ষণ আমি
আপনাকে ঘামের উপকারিতা সম্পর্কে জানালাম এখন জানাবো ঘামের অপকারিতা সম্পর্কে।
দুর্গন্ধ হওয়াঃ প্রায় সকল মানুষের এই একটি বড় সমস্যা হল ঘামে দুর্গন্ধ
হওয়া। যখন ঘাম বের হয় তখন শরীরের অভ্যন্তরীণে থাকা কিছু ব্যাকটেরিয়ার কারণে
ঘাম দুর্গন্ধযুক্ত হয়। এটি আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বাধা সৃষ্টি
করতে পারে। আবার দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম মানুষের কনফিডেন্স লেভেল কমিয়ে দেয়।
আরো পড়ুনঃ
ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়
ত্বকের সমস্যাঃ অতিরিক্ত ঘামের ফলে আমাদের ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘাম বের হওয়ার পর বায়ুতে তে থাকা ধুলাবালি শরীরে এসে মেশার পরে শরীরের লোমকূপ
গুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং তাতে ব্রণ বা ফাঙ্গাস বের হতে পারে । অনেকের ক্ষেত্রে
ঘাম জমে ফুসকুড়িও সৃষ্টি হয় আবার বিভিন্ন ধরনের এলার্জি সৃষ্টি হয়।
পানি শূন্যতাঃ অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় তুলনামূলক অনেক বেশি ঘাম হয়।
ঘাম অত্যধিক পরিমাণে বের হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় এবং
ক্লান্তি বোধ হয়। এর জন্য যাদের শরীর অত্যাধিক পরিমাণে ঘামে তাদের সব সময়
পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত ।
শারীরিক অসুস্থতাঃ অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে ঘাম জমে বা ঘাম বসে গিয়ে
শরীরের অনেক ধরনের ক্ষতি হয়। থাম বসে যাওয়ার ফলে অনেকের সাধারণত কাশি জ্বর
সর্দি হয়ে থাকে। ঘাম বের হওয়ার পরে বাষ্প হয়ে ঠান্ডা হওয়ার ফলে অনেকের শরীরে
ঠান্ডা লাগা ভাব হতে পারে।
এতক্ষণ আপনাকে আমি ঘামের উপকারিতা সম্পর্কে জানালাম। ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক
গুরুত্ব সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানা উচিত অতিরিক্ত ঘাম হলে আমরা কি করব এই
সম্পর্কে।
অতিরিক্ত ঘাম হলে কি করবেন
ঘামের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে আমরা চাইলেই কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মে নিয়ে
আসতে পারি। কয়েকটি নিয়ম হলোঃ
সঠিক পোশাক নির্বাচনঃ আমরা যারা অত্যাধিক ঘর্মাক্ত হই তাদের জন্য সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পোশাক নির্বাচন করা। এমনই পোশাক নির্বাচন করতে হবে যা
আমাদের শরীরের জন্য আরামদায়ক এবং শরিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস প্রবেশ করতে
দিবে। বিশেষ করে সুতির কাপড় পড়া উচিত। অত্যাধিক মোটা কাপড় না পড়াই ভালো৷
বেশি পানি পান করাঃ আমরা উপকারিতা ও অপকারিতাই দেখে এসেছি পানি পান করার
গুরুত্ব। এর জন্যই আমাদের প্রয়োজন মত পানি পান করা উচিত।
সঠিক খাবার গ্রহণঃ আমাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত যুক্ত খাবার পরিত্যাগ করতে
হবে। নির্দিষ্ট পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার গ্রহণ করতে হবে। বেশি আমিষ যুক্ত খাবার
দা শরীরকে গরম করে তা পরিত্যাগ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক
এছাড়াও আমাদের যাদের ঘামের বেশি প্রবলেম তাদের বের হলে ছাতা নিয়ে বের হওয়া ,
বাইরের ভাজাপোড়া ও তেল যুক্ত খাবার পরিত্যাগ করাই উত্তম। একটু পরেই আমি আপনাকে
জানাবো ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব তার আগে ঘাম নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ
হাদিস সম্পর্কে বর্ণনা করবো
ঘাম নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানার আগে কয়েকটি হাদিস নিয়ে আমরা
জানি যা ঘাম সম্পর্কিত।
- ১. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلَا يَأْتِي وَهُوَ يُحِنُّ، وَلْيَأْتِي وَهُوَ طَيِّبُ الرَّائِحَةِ.”
- অনুবাদঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:"যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসে, সে যেন ঘামের গন্ধ নিয়ে না আসে, বরং সে যেন ভালো সুগন্ধি ব্যবহার করে আসে।" (তিরমিজি)
- ২. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:"পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ ।”(তিরমিজি)
- ৩.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: “আল্লাহতালা পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন” (তিরমিজি)
- ৪.মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন; জুমার নামাজের আগে গোসল করে পবিত্র হয়ে আসো।
ঘাম কি শুদ্ধ নাকি অপবিত্র এটা নিয়েও অনেকের মনে ভুল ধারণা আছে। ঘাম আসলে শুদ্ধ
একটা জিনিস এটাতে ওজু বা নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। তারপরেও আমাদের ঘাম নিয়ে
সতর্ক থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা
কারণ ২য় হাদিসটাতে আমরা দেখলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ যেহেতু ঘাম ও
একটু অপরিষ্কার জিনিস তাই আমাদের ঘাম নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত।আমি ঘাম নিয়ে
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সম্পর্কে আপনাকে জানালাম , এখন আমি ইসলামে ঘামের
বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করবো
ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
আপনি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন ইসলামী ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানার
জন্য। আর আপনাকে অপেক্ষা করাবো না।ইসলামের সাথে প্রতিটি জিনিসের বৈজ্ঞানিক
সম্পর্ক রয়েছে তেমন ভাবে ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও সম্পর্ক রয়েছে। তা
হলোঃ
পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতাঃ ইসলাম আমাদের সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকতে
উৎসাহ দেয়। পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকলে মানসিকভাবেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা
যায়। তেমনি বিজ্ঞান ও বলে যে ঘাম জমে শরীরের লোমকূপ গুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং
বিভিন্ন ধরনের ব্রণ ফুসকুড়ি ও এলার্জি সৃষ্টি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিঃ ইসলাম মানসিক স্বাস্থ্য কে অত্যন্ত
গুরুত্ব দেয়। বিজ্ঞান বলে ঘাম বের হওয়ার ফলে কিছুটা মানসিক প্রশান্তি লাভ করা
যায়। ইসলাম সেটাই কামনা করে যে একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য যেন সুন্দর ও
স্বাভাবিক থাকে।
আরো পড়ুনঃ
হাত পা ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ আমরা জেনেছি যে ঘামের মাধ্যমে শরীরের থাকা
অনেক বিষাক্ত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল পদার্থ নিঃসৃত হয়। যা আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শেষকথা
আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে আপনি ইসলামে ঘামের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলেন। এগুলো ঠিকভাবে মেনে চললে আপনি
ইবাদাত বন্দেগি ভালোভাবে করতে পারবেন এবং সমাজেও ভালোভাবে চলতে পারবেন। নিয়মিত
এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে প্রতিদিন একবার হলেও ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url