ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায় - ব্রেন ঠান্ডা রাখার খাবার
মানুষের কোন কাজ ভালোভাবে করার জন্য ব্রেইন বা মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখা খুবই জরুরী।
কারণ মানুষের সকল কাজ ব্রেনের মাধ্যমেই সংগঠিত হয়ে থাকে। আর এ কারণেই আপনি হয়তো
জানতে চান ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামী উপায় সম্পর্কে। আবার আপনারা অনেকেই জানতে চান ব্রেন ঠান্ডা রাখার খাবার সম্পর্কে।
আপনি যদি ছাত্র কিংবা চাকরিজীবী কিংবা গৃহিনী হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন আপনার
ব্রেনের উপর অনেক চাপ পড়ে। এমনতো অবস্থায় আপনাকে সুস্থ থাকতে ব্রেনকে ঠান্ডা
রাখতে হবে।
ভুমিকা
ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় শান্ত মনোভাব বজায় রাখতে। আল্লাহর স্মরণ ও জিকির এর
মাধ্যমে আমাদের ব্রেন কে ঠান্ডা রাখা যায়। আপনি যদি ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায় জানার জন্য এই আর্টিকেলটিতে ক্লিক করে থাকেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় ক্লিক
করেছেন।
আমি আপনাকে জানাবো ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে
চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
ব্রেনে রাগের উৎপত্তির প্রক্রিয়া
ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায় জানার আগে আপনার জানা উচিত ব্রেনে রাগের
উৎপত্তির প্রক্রিয়া। কারণ আপনি যদি ব্রেনে রাগের উৎপত্তি সম্পর্কে না জানেন তাহলে
তার প্রতিকার করবেন কিভাবে। রাগের উৎপত্তি মূলত আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে
সংঘটিত হয়।
আরো পড়ুনঃ
সর্বপ্রকার রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
এই প্রক্রিয়ায় জৈবিক ও মানসিক প্রক্রিয়াগুলো কাজ করে থাকে। মস্তিষ্কের
amygdala নামক একটি অংশ রয়েছে। এই অংশটি মানব দেহের রাগ ও ভয়ের উৎপত্তি ঘটায়।
যখন কোন একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে বা সে বিরক্তিকর পরিস্থিতি
সম্মুখীন হয় তখন সে রাগান্বিত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি ব্রেনের অ্যাড্রেনাল
গ্রন্থি স্ট্রেস হরমোনের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে থাকে।
যা আমাদের রক্তচাপ নিঃসরণ হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করে। এটি শরীরকে আক্রমণাত্মক বা লড়াইয়ের জন্য বা উল্টো পথে ফিরে যাওয়ার জন্য আহ্বান করে। দীর্ঘমেয়াদী
মানসিক চাপ ও ক্লান্তি বোধ মানুষের রাগ বৃদ্ধি করে তোলে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই
মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না হলে সে ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে যায় ।
রাগলে ব্রেনের যে ক্ষতি গুলো হয়
রাগ শুধু আমাদেরকে মানসিকভাবেই দুর্বল করে না , বরং রাগ আমাদের শারীরিকভাবেও
দুর্বল করে দেয়। এর জন্যই আমাদের জানা উচিত ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়।
তবে তার আগে চলুন জানি রাগে ব্রেনের যে ক্ষতিগুলো হয়। অত্যাধিক রাগের কারণে
Amygdala অসক্রিয় হয়ে পড়ে ।
প্রয়োজন অনুযায়ী রাগ বা ভিতি কোনটাই কার্যকরি হয় না।ব্রেনের অন্যান্য অংশগুলো
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাগের ফলে ব্রেন অনেক ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে
কোন সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে এইগুলা বুঝতে পারে না এক কথায় সিদ্ধান্তহীনতায়
ভোগে।
দীর্ঘমেয়াদী রাগের কারণে মস্তিষ্কের নিউরন ডেনড্রাইট ও আক্সন গুলো ক্ষতিগ্রস্ত
হয়; যা ব্রেনের কার্যক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাগ বেশি হলে
রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ; রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক ব্যক্তি হার্ট ফেইলার বা
হার্ট স্ট্রোক করে মারা যান।
রাগ আমাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে তাই আমাদের ব্রেন ঠান্ডা রাখার
ইসলামিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত।
ব্রেন শুকিয়ে যায় কেন
অনেকের মনের মধ্যে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খায় যে ব্রেন শুকিয়ে যায় কেন। ব্রেন
অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কারণেই শুকিয়ে যেতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ
হলোঃ ব্রেন কে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে না লাগানো। ব্রেন শুকিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো বয়স।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের ব্রেনের স্পেস কমতে থাকে এবং একসময় ব্রেনের
কোষগুলো মারা যাওয়া শুরু করে। যার ফলে মস্তিষ্কের কিছু অংশ সংকুচিত হয়ে যায় ।
আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পানি শূন্যতা। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না
থাকলে ব্রেন শুকিয়ে যেতে পারে ।
কোন ব্যক্তি স্ট্রোক করলে তার ব্রেনের সেই অংশটুকু শুকিয়ে যেতে পারে। এই স্টোক
থেকে বাঁচতে আপনাকে জানতে হবে ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়। অতিরিক্ত
মদ্যপানের ফলেও এই মস্তিষ্কের কিছু অংশ বা কিছু অংশের কোষ মারা যাওয়ার ফলে ব্রেন
শুকিয়ে যেতে পারে।
বাচ্চার ব্রেন ঠান্ডা রাখার উপায়
কিছু কিছু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জিনগত বৈশিষ্ট্য বা বংশগত বৈশিষ্ট্যের কারণে
অত্যাধিক রাগ লক্ষ্য করা যায়। বাচ্চাদের ব্রেন ঠান্ডা রাখার উপায় এর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হল
সঠিক খাদ্যাভ্যাসঃ বাচ্চাকে পুষ্টি গুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়াতে হবে। বিশেষ
করে মায়ের দুধের পাশাপাশি দুই বছর পার হওয়ার পরে তাকে সবজি, কলা, ও ভিটামিন জাতীয় ফলমূল খাওয়াতে হবে।
পানি পান করানোঃ ছোট বাচ্চাদের কখন কি প্রয়োজন এটা অনেকাংশে প্রকাশ করতে
পারে না। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার পরিবারের কাউকে দায়িত্ব নিয়ে তাকে নিয়মিত এবং
প্রয়োজনমতো পানি পান করাতে হবে।
বাচ্চার সাথে ভালো ব্যাবহারঃ বাচ্চার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চা
মানুষ এর সাথে আপনি যেমন ব্যবহার করবেন সে ঠিক তেমনটাই আপনাকে ফিরিয়ে দেবে।
বাচ্চার সাথে কখনো খিটখিটে মেজাজে কথা বলা যাবে না। তাকে শান্ত স্বাভাবিকভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। পিতা বা মাতাকে ব্রেন ঠান্ডা রেখে ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক
উপায় গুলো বাচ্চাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
বাচ্চাকে পজিটিভ রাখাঃ বাচ্চাকে সব সময় পজিটিভ চিন্তা ভাবনায় রাখতে হবে।
তার মধ্যে যেন নেগেটিভিটি না ঢুকে যায় সেই দিকটি খেয়াল করতে হবে। বাচ্চা
পজিটিভনেস হারিয়ে ফেললে তার ব্রেন অন্যদিকে ধাবিত হয় এবং রাগ বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ
কি খাওয়ালে মুরগির ওজন বাড়ে
সামাজিকভাবে গড়ে তোলাঃ এখন লক্ষ্য করলে দেখা যায় বাচ্চাকে সাধারণত রুমের
মধ্যে একঘরে করে রাখা হয় । বাচ্চার মানসিক ক্ষতি ও রাগ বৃদ্ধির জন্য এটি সবচেয়ে
বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য বাচ্চাকে সামাজিকভাবে করে তুলতে হবে। পর্যাপ্ত
পরিমাণে খেলাধুলা সুযোগ করে দিতে হবে।
ব্রেন ঠান্ডা রাখার খাবার
মানুষ হিসেবে আমাদের ব্রেন কে ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত জরুরী। ব্রেন ঠান্ডা রাখলে মন
ও শরীর দুইটাই ভালো থাকে। মন ও শরীর ভালো রাখার জন্য কয়েকটি খাবার সম্পর্কে
বর্ণনা করি।
- খেজুরঃ খেজুর একটি উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য। এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের দিকে পদ্ধতি পরিমাণ উৎপাদিত হয়। খেজুরে রয়েছে অত্যাধিক পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ যা ব্রেন কে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- মধুঃ মধু মস্তিষ্কের কোষগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে কারণ মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- আখরোটঃ বাদামের মধ্যে আখরোট অন্যতম। এ আখরোট বাদাম আমাদের শরীরের জন্য ব্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ফলমুলঃ আমাদের ব্রেন ঠান্ডা রাখার জন্য কয়েকটি ফলমূল ভক্ষণ করা উচিত। যেমন কলা,আপেল, বেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি জাতীয় ফল ।
আমি আপনাকে এতক্ষন জানালাম ব্রেনকে ঠান্ডা রাখার খাবার। এখন আমি আপনাকে বর্ণনা
করবো ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়।
ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়
ইসলাম আমাদের সব সময় ব্রেনকে ঠান্ডা রাখার নির্দেশনা দেয়। ব্রেন ঠান্ডা রাখার
ইসলামিক উপায় বর্ণনা করা হলোঃ
- দোয়া ও জিকিরঃ দোয়া ও জিকির মনের ভেতর এক রকম প্রশান্তি নিয়ে আসে । এবং মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে আল্লাহর স্মরণে ব্রেন ঠান্ডা থাকে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।
- নামাজ আদায়ঃ মহান রাব্বুল আলামিন সকল মুসলমানের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আমরা যদি প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি তাহলে সেই নামাজ আমাদের ব্রেন কে প্রশান্ত করে রাখে।
- কোরআন তেলাওয়াতঃ কোরআন তেলাওয়াত করা মানে মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলা। আর মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বললে আত্মিক শান্তি আসবে এটাই স্বাভাবিক তাই আপনার উচিত প্রত্যহ কোরআন তেলাওয়াত করা যাতে আপনার ব্রেন শান্ত থাকে।
- ধৈর্য ও বিশ্বাসঃ মহান রাব্বুল আলামিনের উপর ধৈর্য ও বিশ্বাস রেখে আপনি আপনার ইবাদত কন্টিনিউ করুন দেখবেন মনের মধ্যে এবং আপনার ব্রেন একরকম ঠান্ডা হয়ে যাবে।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়।এখন ব্রেন বাড়ানোর
কিছু ইসলামিক দোয়া জানাবো আপনাকে।
ব্রেন বাড়ানোর দোয়া
ব্রেন বাড়ানোর জন্য ডাক্তারেরা বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে বললেও আসলে
ব্রেন বাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার রয়েছে। তাই ব্রেন এর
জন্য ইসলামে অনেক কয়েকটি দোয়া রয়েছে । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা
হলো আপনার সুবিধার্থে
১. رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
- অর্থঃ হে প্রভু!আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন
২.رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي. وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي. وَ احۡلُلۡ عُقۡدَۃً مِّنۡ
لِّسَانِیۡ. یَفۡقَهُوۡا قَوۡلِیۡ
- অর্থঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমার বক্ষকে প্রশস্ত করুন এবং আমার জন্য আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
৩.
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا
أَنتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
- অর্থঃ‘হে আল্লাহ আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তোমার প্রশংসা করছি।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই তুমি ছাড়া কোনো কষ্ট নেই। এবং আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার দিকে ফিরে আসতে চাই।
শেষকথা
উপরের উল্লেখিত আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনাকে জানালাম ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক
উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
আরো পড়ুনঃ দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা
আশা করি আপনি এগুলা মেনে চললে আপনার ব্রেন ঠান্ডা থাকবে এবং আপনি স্বস্তি বোধ
করবেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার
করে জানিয়ে দিন। এবং এরকম তথ্যবহুল বিষয় সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url