স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক - স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ
আমাদের প্রত্যেকেরই অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে। এটি কখনো পরিবারের সঙ্গে কখনো
বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কিংবা কখনো অপরিচিত মানুষদের সঙ্গে। যদিও বেশিরভাগ সময়ই
আমরা সেটি বেশিদিন মনে রাখতে পারি না। এজন্য আপনারা অনেকেই জানতে চান স্মৃতির উপর
নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক আবার অনেকেই জানতে চান স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ
সম্পর্কে।
মানুষের জীবনে এমন কিছু স্মৃতি থাকে যেগুলো মুছে ফেলা অত্যন্ত জরুরী। এগুলো মনে
রাখলে শুধু কষ্টই হয়। আবার এমন অনেক স্মৃতি আছে যেগুলো সবাই চায় সারা জীবন মনে
রাখতে।
ভূমিকা
স্মৃতি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য বিষয়৷ এটি নিয়ন্ত্রণ করে
আমাদের এটা চিন্তা ভাবনা ভালো-মন্দ ও ভালো থাকা নিয়ে। স্মৃতির মাধ্যমে আমরা আগের
অনেক অভিজ্ঞতা মনে রাখি। স্মৃতি যে সবসময় ভালো হয় তা কিন্তু নয়, তার মধ্যে
কিছু খারাপ স্মৃতি ও থাকে। আপনি যদি জানতে চান স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো
টেকনিক সম্পর্কে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
স্মৃতি কি? স্মৃতি কত প্রকার
স্মৃতি হল আমাদের মস্তিষ্কের একটি জৈবিক ক্রিয়া যা আমাদের পুরানো অভিজ্ঞতা,
কার্য সম্পাদনা সংরক্ষণ করে রাখে এবং তা অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে
চিন্তাভাবনার মাধ্যমে। স্মৃতি সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় তারমধ্যে সংবেদি
স্মৃতি অন্যতম।
আরো পড়ুনঃ
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
সংবেদি স্মৃতি আমাদের শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মিলি সেকেন্ড এর
মধ্যে আমাদের মস্তিষ্কেতা প্রেরণ করে। এটি স্মৃতির প্রথম স্তর, এই স্মৃতি তথ্য কে
তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করে এবং তা প্রসেসিং এর মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে প্রেরণ
করে।
এই স্মৃতি অনেকটা ঠুনকো হওয়ায় এই স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক আমাদের
জানা উচিত। স্মৃতির আর দুইটি প্রকার হলো স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি। স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি হল যে স্মৃতি মাত্র অল্প সময় জন্য আমাদের মস্তিষ্ক
অবস্থান করে। দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি যেগুলো মস্তিষ্কে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করে।
স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি ও দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতির পার্থক্য
এই দুইটি স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে এদের মধ্যে
মূল কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন, স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি শুধুমাত্র ২০
থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখে। স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিতে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি ৫ থেকে ৭ টি আইটেম মনে করে রাখতে পারে।
এই স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি সচেতন ভাবে মনে রাখা তথ্য। এটি অবিলম্বে প্রয়োজনীয়তা
অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়। এই স্বল্প মেয়াদী স্মৃতি কে দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতিতে
রূপান্তর করা যায়। দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তরিত করতে বারবার এটি স্মরণ করতে
হয়।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা
এবার আপনাকে আমি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি নিয়ে জানাবো। দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি আবার
কয়েক ধরনের হতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অভ্যাস গত কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা
জন্মগত ইত্যাদি ধরনের হতে পারে। আবার তা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুঃখজনক স্মৃতি হতে
পারে।
দু:খ কম পাওয়ার জন্যে স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক আমাদের জানা উচিত ।
দীর্ঘ মেয়াদি স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি দিন হয়ে থাকে । অনেক ক্ষেত্রে এটি
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থেকে যায়। দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে অসংখ্য তথ্য এবং অসংখ্য
অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে রাখা যায়।
ভালো ও খারাপ স্মৃতির পার্থক্য
ভালো ও খারাপ স্মৃতি দুটি মানব জীবনের অভিজ্ঞতার ফসল বা নিজের কর্মফলের ফসল
হিসেবে বলা যায়। ভালো স্মৃতি যা আমাদেরকে আনন্দ দিয়ে থাকে। আমাদের সকল স্মৃতি
গুলো যেন ভালো হয় বা আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারি সে জন্যে হলেও আপনার স্মৃতির উপর
নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক নিয়ে লিখা এই আর্টিকেল টি পড়া উচিত।
ভালো স্মৃতি হতে পারে আমাদের কোনো ভালো সময় আমাদের কোন সাফল্য পরীক্ষার ভালো
রেজাল্ট বা পছন্দের মানুষের সাথে সময় কাটানো বন্ধুদের সাথে হাসি ও মজা করার সময়
এগুলা মস্তিষ্কে ভালো স্মৃতি হিসেবে জমে থাকে।
ভালো স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক আমাদের সকলেরই
জানা উচিত কিন্তু আমরা কেউ খোঁজ করি না এই বিষয়ে। আমাদের কাছে খারাপ স্মৃতি গুলো
হল ব্যর্থতা,পরীক্ষায় ভালো না করা, মানসিক ট্রমা, এটি আমাদের ভয় বাড়িয়ে তুলে।
ভালো স্মৃতি ও যেমন আমাদের শিক্ষা দেয় তেমনি খারাপ স্মৃতি ও আমাদের সমপরিমাণ
শিক্ষা দিতে পারে।
প্রেমিক বা প্রেমিকার স্মৃতি মুছে ফেলার উপায়
অনেকে প্রেমিক বা প্রেমিকার স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ খুঁজে থাকেন কিন্তু এখন আমরা
আগে জানব তাত্বিক ভাবে স্মৃতি মুছে ফেলার উপায়।স্মৃতি মুছে ফেলার উপায় জানার
সাথে আমাদের স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা
উচিত।
আমাদের মস্তিষ্ক থেকে কোন কিছু মুছে ফেলা অত্যন্ত কষ্টকর। আমরা এখন জানব কিভাবে
সহজ ভাবে স্মৃতি মুছে ফেলানোর যায় বা চেষ্টা করা যায়। স্মৃতি মুছে ফেলার প্রথম
শর্ত হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং নতুন কোন কাজে মনোনিবেশ করা। সামাজিক কোনো কাজে
নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
প্রেমিক বা প্রেমিকার কোন কিছু উপহার বা সামগ্রী যদি থেকে থাকে যা স্মৃতি হিসেবে
আমরা সংরক্ষণ করি তা ফেলে দেওয়া নষ্ট করে ফেলা বা পুড়িয়ে দেওয়া। এইগুলো
সরিয়ে রাখা উচিত এগুলো বারবার আমাদের আগের স্মৃতিতে নিয়ে যাবে। আমাদের নতুন
নতুন অভ্যাস ও সব তৈরি করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
আমাদের প্রতিদিন একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যে সকাল থেকে আমি রাত অব্দি আজকে
কি কি কাজ করব। এই সকল স্মৃতিগুলো পুরোপুরি মুছে ফেলা না গেলেও উপরে উল্লেখিত সকল
কাজগুলো করলে আপনি কিছুটা হলেও আগের স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে
পারবেন।
আপনি যদি স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক সম্পর্কে জানার জন্য এই
আর্টিকেলটিতে প্রবেশ করে থাকেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এখন আপনাকে
জানাবো স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক।
স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর টেকনিক
আমরা যখন আমাদের স্মৃতিগুলো নিয়ে ভাবতে থাকি তখনই আমরা স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ
বাড়ানো টেকনিক সম্পর্কে ভাবতে থাকি। আমাদের স্মৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো উচিত।
স্মৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে মনোযোগ কে বৃদ্ধি ও
মনোযোগ কে কেন্দ্রীভূত করা।
তথ্যকে মিনিমাইজ করে উপস্থাপন করা এবং নতুন তথ্য একাধিকবার পড়া। নতুন দে তথ্য
গুলো জানব একাধিক সময়ে একাধিক বার তা অনুশীলন করা। যে তথ্যগুলো বা রে স্মৃতিগুলো
আমরা জানবো তা অন্যের সাথে শেয়ার করা। যা আমাদের স্মৃতিশক্তিকে আরও বৃদ্ধি করে
দেয়।
নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে ও পুষ্টি গুণসম্পন্ন খাদ্য
গ্রহণ করতে হবে। মানসিক ভিজুয়ালাইজেশন বাড়াতে হবে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখতে
স্মৃতিকে পুনরুদ্ধার করতে গল্প আকারে তা সাজাতে হবে।
উপরে উল্লেখিত কয়েকটি যিনি সম্পর্কে আপনি জানার পরে তা পালন করতে পারলে আপনি
নিজের স্মৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে পারবেন। এই ধরনের মানসিক ভিজুয়ালাইজেশন এর
মাধ্যমে স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক অর্জন করা যায়।
স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ
স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ বিজ্ঞানীরা এখন অবধি সম্পূর্ণভাবে আবিষ্কার করতে
পারেননি।কিন্তু আমরা চাইলেই স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক ফলো করে তা
নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবুও কয়েকটি স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ সম্পর্কে আপনাকে বর্ণনা
করি
আরো পড়ুনঃ
ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
প্রোপানলল ( Propanolol) : আঘাত জনিত স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য কিছু কিছু
নির্দিষ্ট মানুষের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এটি ঘটনার আবেশীয়
প্রভাব কমিয়ে দেয়। তবে এই ওষুধের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে টা হলো
শ্বাসকষ্ট মাথা ব্যাথা এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে।
ডি সাইক্লোসেরিনঃ এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যা গ্রাম পজিটিভ
ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের স্মৃতি মুছে
ফেলার ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত
কার্যকারী। এটি নতুনভাবে স্মৃতি গঠন ও রূপান্তর করতে পারে। এটারও কিছু
প্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন মাথা ব্যথা, কাপুনি,বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি
এমডিএমএ থেরাপিঃ এমডিএমএ থেরাপির মাধ্যমে অনেক স্মৃতি রূপান্তরিত করা
যায়। এবং আবেগজনিত কিছু ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ও আস্থা বৃদ্ধি করা যায় । এই
থেরাপি ডোপামিন এর মত কাজ করে থাকে।
উপরে উল্লেখিত সকল ঔষধ ও থেরাপী শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন
ছাড়া ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো আপনার শরীরে অনেক ধরনের পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
তাই আমাদের উচিত এই ধরনের ঔষধ পূর্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। স্মৃতি
মুছে ফেলার অংশগ্রহণ করার চেয়ে স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক অর্জন করা
সবচেয়ে উত্তম।
স্মৃতি মুছে ফেলার বৈজ্ঞানিক গবেষণা
পৃথিবী যেমন প্রতিনিয়ত ধাবমান হচ্ছে তেমনি বিজ্ঞান ও অগ্রসর হচ্ছে এবং নতুন
সাফল্যের পথ খুঁজে বের করছে । তেমনি ভাবে মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলা নিয়ে
বৈজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন।
যেমন এংগ্রাম থিওরির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা রোগির স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করে
যাচ্ছেন যদিও এটি এখনো কার্যকরী হয়ে ওঠেনি তবে আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই তা
উঠবে । জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন যাবৎ এই
স্মৃতি মুছে ফেলা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে এ সকল ওষুধের উপর নির্ভর না করে আমাদের স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক
অর্জন করে সে অনুযায়ী জীবন-যাপন করা উচিত।
শেষ কথা
উপরের এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানালাম স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক
ও স্মৃতি মুছে ফেলার ঔষধ সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিজেকে অনেকটাই
মানসিকভাবে পরিপূর্ণ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ
১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায়
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের জানিয়ে দিতে
শেয়ার করুন। এবং এরকম প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি
ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url