ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প - ব্যালন ডি অর কেন দেওয়া হয়?
পৃথিবীতে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। আর এই ফুটবলে একটি পুরস্কারের নাম হল
ব্যালন ডি অর। ব্যালন ডি অর সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানি তবে ব্যালন ডি অরের
পর্দার পেছনের গল্প অন্যরকম। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাবো ব্যালন ডি অর কেন
দেওয়া হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার
অনুরোধ রইলো।
ব্যালন ডি অর একটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। অনেক ফুটবল প্লেয়ারের স্বপ্ন জীবনে
একবার হলেও এই পুরস্কারটি অর্জন করা। তবে ২০০৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেসি
রোনালদো এই পুরস্কার সবচেয়ে বেশিবার ভাগাভাগি করেছেন।
ভূমিকা
ফুটবল সারা বিশ্বের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এটি শুধু একটি খেলা নয়, এটি
একটি ঐতিহ্য যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং এই খেলার একটি বড় পুরুষ্কার হলো ব্যালন
ডি অর। আমি আপনাকে এই আর্টিকেল টি তে ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প ও ব্যালন
ডি অর সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো
ব্যালন ডি অরের ইতিহাস
ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প জানার আগে চলুন আপনাকে জানাই ব্যালন ডি অর এর
ইতিহাস সম্পর্কে।পৃথিবীর সকল জিনিসেরই শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে । ফুটবলেরও তেমন কিছু
শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে,তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যালন ডি অর ।
প্রতিবছর ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন এর পক্ষ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা প্লেয়ার কে
এ পুরস্কারটি প্রদান করা হয়। বিখ্যাত সাংবাদিক (Gabriel Haunt) গ্যাব্রিয়েল
হান্ট ১৯৫৬ সালে এই পুরস্কারের প্রস্তাবনা প্রদান করেন । তার প্রস্তাবে সাড়া
দিয়ে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন এই পুরস্কার অর্থাৎ ব্যালন ডি অর দেওয়া শুরু করে
।
আরো পড়ুনঃ
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
তখন এটি শুধুমাত্র ১৯৯৫ সালে কয়েকজন সাংবাদিক ও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে
ব্যালন ডি অর এর যোগ্যতার বিচার পা যোগ্যতার মানদন্ডে অনেক বড় পরিবর্তন না আসার
জন্যে । পরবর্তী সংস্করণে 1995 সালে বিশ্বের সকল প্লেয়ারদের জন্য ব্যালন ডি অর
উন্মুক্ত করা হয়।
২০১০ সাল অব্দি ব্যালন ডি আর এর সময় ফিফা কোনভাবেই জড়িত ছিল না। কিন্তু 2010
সালে এসে ফিফা সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্স ফুটবল এর সাথে একত্রিত হয়ে তারা ব্যালন ডি
অর পুরস্কার প্রদান করবে । ২০১৫ সালে এসে আবার ফিফা ও ফ্রান্স ফুটবল এর বিতর্কিত
সিদ্ধান্তে আবার তারা আলাদা হয়ে যায় ।
অতঃপর আবার ফ্রান্স ম্যাগাজিন আগের মতই আবার ব্যালন বি অর দেওয়া শুরু করে । একটু
পরেই আমি আপনাকে জানাবো ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প সম্পর্কে জানাবো ।
ব্যালন ডি অর কেন দেওয়া হয়
ব্যালন ডি অর ফুটবলের একটি অন্যতম পুরস্কার । একটা প্লেয়ারে ক্রীড়া দক্ষতা এবং
তার সমসাময়িক পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। আমরা
অনেকেই ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প সম্পর্কে জানিনা এই আর্টিকেলটিতে আমরা
সে সম্পর্কে জানব।
অসামান্য দক্ষতা বা অসামান্য পারফরমেন্স কারণ একটি খেলোয়ার কে পুরস্কারটি দেওয়া
হয়। দলের হয়ে যে সবচেয়ে বেশি গোল করা বা সবচেয়ে বেশি গোল করতে সাহায্য করা
অর্থাৎ অ্যাসিস্ট করা বা সমস্ত সময় খেলার ওপর প্রভাব বিস্তার করা এসবের ভিত্তিতে
ব্যালন ডি আর দেওয়া হয়ে থাকে ।
ভোটদানের পদ্ধতি ও নিয়মাবলী
ব্যালন ডি অর দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়মাবলী ও আইন মেনে ভোট দান কর্মসূচি
চলে। ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প জানার আগে ভোটদানের পদ্ধতি ও নিয়মাবলী
জানা উচিত । এই ভোট দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকদের বাছাই করে
নেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ
হাত পা ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম
এটি বাছাই করে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন। যারা ফুটবল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন
এবং ফুটবল নিয়ে তারা অনেক বিশেষজ্ঞ শুধুমাত্র তাদেরকেই ভোট দেওয়ার জন্য সুযোগ
দেওয়া হয় । প্রতি দেশ থেকে একটি সাংবাদিক ভোট দিতে পারেন। ভোট দেওয়ার নিয়ম হল
একজন সাংবাদিক তার পছন্দমত প্রথম থেকে পঞ্চম পর্যন্ত লিস্ট জমা দিতে পারেন।
লিস্টের প্রথম জনের জন্য থাকে ছয় পয়েন্ট লিস্ট এর দ্বিতীয় জনের জন্য থাকে ৪
পয়েন্ট এভাবেই পর্যায়ক্রমে পঞ্চম পর্যন্ত ৩,২,১ পয়েন্ট থাকে। এভাবেই যে
প্লেয়ারের পয়েন্ট সর্বোচ্চ হয় সেই ব্যালন ডি জয়ের গৌরব অর্জন করে।
প্রথম ব্যালন ডি অর বিজয়ী
যদিও ১৯৫৬ সালে ব্যালন ডি অর দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু তখন এটা শুধু ইউরোপীয়দের
মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে এটি নন ইউরোপীয়দের মধ্যে দেয়া শুরু
হয়। প্রথমবারের মতো ১৯৫৬ সালে ইউরোপীয়দের মধ্যে ব্যালন ডি আর পুরস্কার অর্জন
করেন একজন কিংবদন্তি যিনি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন তার নাম স্ট্যানলি
ম্যাথিউস।
তিনি ব্যাকপুল ক্লাবের হয়ে খেলতেন। ১৯৯৫ সালে ব্যালন ডি অর এর নিয়মের ব্যাপক
পরিবর্তন হওয়ার পর প্রথম নন ইউরোপীয় হিসেবে ব্যালন ডি অর জয় করেন লাইবেরিয়ার
ফুটবলার জর্জ উইয়াহ। জর্জ উইয়াহ এসি মিলানের হয়ে খেলতেন।
ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প অত্যন্ত জটিল। এটির জন্য একজন প্লেয়ারকে অনেক
পরিশ্রম ও ত্যাগ করতে হয়।
নারী ফুটবলে ব্যালন ডি অর
২০১৮ সাল অবধি ব্যালন ডি অর শুধুমাত্র পুরুষদের দেওয়া হতো। ২০১৮ সালে এসে
ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষদের পাশাপাশি এই পুরস্কারটি
মেয়েদেরকেও দেওয়া হবে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার অর্জন করেন
নরওয়ের বিখ্যাত নারী ফুটবলার আডা হেগারবার্গ।
তিনি লিও ক্লাবের হয়ে বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৯ সালে নারী ব্যালন
ডি'অর লাভ করেন যুক্তরাষ্ট্রের মেগান রাপিনো। টানা দুই বার অর্থাৎ ২০২০ এবং ২০২১
এ সালে নারী ব্যালন ডি'অর লাভ করেন স্পেনের আলেক্সিয়া পুটেলাস।
২০২৩ সালে নারী ব্যালন ডি'অর লাভ করেন তিয়ানা বেনামাতি স্পেনের ফুটবলার। এতক্ষণ
আমি আপনাকে নারী ফুটবলে ব্যালন ডি অর জয়িদের সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম। একটু পরে আমি
আপনাকে জানাবো ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প।
কেন এটি ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার
ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে চলুন আপনাকে
জানাই কেন ব্যালন ডি অর কে সবচেয়ে মর্যাদাপুর্ণ পুরস্কার হিসেবে ফুটবলে গ্রহণ
করা হয়। এক বড় ঐতিহ্যের কারণে এটিকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে
গ্রহণ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ
উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা
কারণ পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যে ফুটবল খেলে না। এই সকল দেশের ফুটবল খেলোয়াড়দের
মধ্যে সর্ব সেরা ফুটবল খেলোয়াড় বাছাই করা হয় ব্যালন ডি'অর এর মাধ্যমে শুধু তাই
নয় প্রতিটা দেশের জন প্রতিনিধি ভোট দেওয়া সুযোগ পায়। বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকটি দেশের প্রতিনিধি ভোট দেওয়ার কারণে এই পুরস্কারের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক
হারে বৃদ্ধি পায় যার ফলে এটি অনেক মর্যাদাবান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই ব্যালন ডি আর কে গ্লোবাল ফুটবলের স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হয়। একজন ফুটবল ভক্ত
থেকে শুরু করে একজন ফুটবল খেলোয়ার এর কাছে এর গুরুত্ব মহামুল্যবান। তবে এই
ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প তা সকল প্লেয়ারের জন্য অনেক ত্যাগ ও
পরিশ্রমের। এখন আমি আপনাকে জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি অর জয়ী
খেলোয়াড়।
সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি'অর জয়ী ফুটবলার
একজন প্লেয়ার সেরা হয়ে ওঠেন তার দক্ষতা, কঠোর অনুশীলন তার বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে
মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে। এমন একজন গুণসম্পন্ন খেলোয়ার হলেন লিওনেল আন্ড্রেস
মেসি। যিনি বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিতেছেন যেমন লা লিগা,ওয়েফা চ্যাম্পিয়নস
লীগ জিতেছেন।
আরো পড়ুনঃ
স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো টেকনিক
আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা ও ২০২২ সালে ফুটবলের সবচেয়ে বড়
টুর্নামেন্ট ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেছেন। এই সকল দক্ষতার কারণে তিনি
সবচেয়ে বেশি বার ব্যালন ডি'অর জিতেছেন।
লিওনেল মেসি টানা চারবার ২০০৯ ২০১০,২০১১,২০১২ সহ ২০১৫, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ মিলিয়ে
সর্বমোট আটবার ব্যালন ডি'অর জিতেছেন। লিওনেল মেসির এই অর্জন তাকে ফুটবলের অন্যতম
সেরা খেলোয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চলুন এবার আমি আপনাকে জানাই ব্যালন ডি
অরের পর্দার পেছনের গল্প।
ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প
একজন প্লেয়ারের শুধু ব্যক্তিগত অর্জনে ব্যালন ডি'অর জয় করা সম্ভব নয়। তার দলকেও
তার সাথে সমান ভাবে পারফরম্যান্স করতে হয়। একজন প্লেয়ার ব্যালন ডি'অর এর জন্য
নিজেকে অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে তৈরি করেন।
আরো পড়ুনঃ
ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়
ব্যালন ডি'অর পাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করেছেন লিওনেল মেসি ও
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এইগুলা নিয়ে বরাবরই বিতর্ক হয়ে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । যেমন ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর কারণে ব্যালন ডি অর পুরস্কার দেওয়া হয়
নি।
সকলের ধারণা ছিল রবার্ট লেওয়ানডস্কি এ পুরস্কারটা পাবেন,কিন্তু চমকপ্রদভাবে
ব্যালন ডি অর অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। এই রকম অনেক ধরণের গুঞ্জন হলেও ফ্রান্স
ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ অনেক স্বচ্ছতার সাথে এ পুরস্কারটি দিয়ে থাকে।
শেষ কথা
প্রতিটি পুরস্কার একজন মানুষকে অণুপ্রাণিত করে এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ আরো সহজ করে
তোলে। আশা করি এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প ও
ব্যালন ডি অর কেন দেওয়া হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছি।
আরো পড়ুনঃ
মস্তিষ্কের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আমার এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে
জানিয়ে দিন। এবং নিয়মিত এরকম বিষয় সম্পর্কে জানতে প্রতিদিন একবার হলেও
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url