উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা - সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়কর সৃষ্টি উট
আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে উট তেমন একটা পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র কোরবানির
সময় কিছু কিছু বাজারে পাওয়া যায়। তারপরেও অনেকেই আপনারা উটের মাংসের গুনাগুন ও
উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি আপনি
আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে উট একটি জনপ্রিয় পশু। কোথাও উট নিয়ে এসেছে এমন সংবাদ
পেলে মানুষের ঢল নামে উট দেখার জন্য।
ভূমিকা
উট পৃথিবীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও অদ্ভুত প্রাণী। উট প্রাণী নয় এটি একটি
সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। উট হাজার বছর ধরে মানবজাতির বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে
আসছে। এই প্রাণীটি নানা ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। উট ভূমিতে বাহন হিসেবে ব্যবহৃত
হয়।
আরো পড়ুনঃ
তেঁতুল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানব উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি যদি
এই আর্টিকেলটি আপনি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা
সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন ।
উটের পরিচিতি ও ইতিহাস
উট একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। আমরা জানি উট প্রধানত মরুভূমি বা শুষ্ক অঞ্চলে বসবাস
করে। ওকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়ে থাকে। উট অত্যন্ত শান্তশিষ্ট প্রাণী। উট অনেক
প্রাচীন একটি প্রাণী। সাধারণত আর্কিওলজি থেকে জানা যায় আজ থেকে প্রায় চার হাজার
বছর পূর্বে উট কে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পোষ মানানো শুরু হয় ।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বিশেষ করে ইরান ইরাক মিশর ও উল্লেখযোগ্য সৌদি আরব এর মানুষগণ
উটকে ভারী বোঝা বাহন করার জন্য ব্যবহার করা শুরু করে। অতঃপর এটি শুধু বোঝা বহন
করার জন্যই নয় এর মাংস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা শুরু করে।
আমরা এই আর্টিকেলটিতে জানবো উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। উটের
মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সেই সময়ের মানব সভ্যতা না জানলেও বর্তমানে আমাদের
উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত।
উটের প্রজাতি ও বৈশিষ্ট্য
মরুভূমির জাহাজ উট। এটি শুধু বাহন হিসাবেই নয় বরং এটির মাংস খাদ্য হিসেবে
ব্যবহৃত হচ্ছে। উটের প্রজাতি অনুসারে সাধারণত উট দুই প্রকার। ডোরা উট ও নন ডোড়া
উট। ডোরা উটের ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি কুজ থাকে।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা
এই উট পাওয়া যায় মধ্য এশিয়ার দিকে যেমন মঙ্গোলিয়া,চীন ও কাজাকিস্তানে। এই উটের
শক্তি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। নন ডোরা উটের কুজ একটি হয়ে থাকে। এই উট মূলত
আফ্রিকা ও শুষ্ক অঞ্চলে যেমন, সাহারা মরুভূমি ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশের দিকে পাওয়া
যায়। এরা দীর্ঘ সময় পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। এবার আমরা জানি উটের কয়েকটি
বৈশিষ্ট্য নিয়ে ।
- উটের কুজঃ অনেকের মনে একটু ধারণা যে উটের খুঁজে হয়তো পানি জমে থাকে কিন্তু ধারণাটি সঠিক নয়। উটের খুজে অত্যাধিক পরিমাণে চর্বি জমা থাকে। এই চর্বি প্রতিকূল পরিবেশে যখন উটের খাদ্যের অভাব দেখা যায় তখন হিসেবে কাজ করে
- পানি সংরক্ষণ ক্ষমতাঃ উট দীর্ঘ সময় পানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। উট একবার পানি খেলে অনেকদিন অবধি সেটি সঞ্চয় করে রাখে।
- তাপ সহ্য করার ক্ষমতাঃ উট মরুভূমিতে থাকার কারণে সৃষ্টিকর্তা তাপ সহ্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন। উট ৪০ থেকে ৪৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে সক্ষম। উটের শরীরে ঘাম হয় না বললেই চলে তারা দীর্ঘক্ষণ তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারে।
- পা ও পায়ের পাতাঃ উটের পা অনেক লম্বা ও চওড়া এবং শক্তিশালী হওয়ার কারণে মরুভূমিতে হাঁটতে সুবিধা হয়। যদি পায়ের পাতা ও পা শক্তিশালী না হয় তবে মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে উটের হাঁটতে কষ্ট হবে।
- তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও ঠোঁটঃ উটের দৃষ্টি খুবই তীক্ষ্ণ হয় মরুভূমিতে চলতে খুব সুবিধা হয়। এবং ঠোঁট ও জিহবা খুব শক্ত হয় কাটাযুক্ত লতা পাতা খেতে সুবিধা হয় ।
উটের অভিযোজন ক্ষমতা
মহান সৃষ্টিকর্তা উটের এক অদ্ভুত অভিযোজন ক্ষমতা দিয়েছেন । বিশেষ করে উটের কুজ।
উটের পানি সংরক্ষণ করার ক্ষমতা। উট এর তাপ সহ্য করার ক্ষমতা। উটের তীক্ষ্ণ
দৃষ্টি। উটের শক্তিশালী পা এবং শক্তিশালী ঠোঁট ও শক্তিশালী জিহ্বা।
সাধারণত গ্রীষ্মের সময় উট দিনে শেডের ভেতরে অবস্থান করে এবং রাত্রিতে খাবার
গ্রহণ বা খাবার সংগ্রহ জন্য বের হয়।একটি উট সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর অব্দি বাঁচতে
পারে ।তবে কিছু কিছু উট ৫০ বছরের উপরেও বাচে।
একটি উট সাধারণত চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। উটের এই সকল
অভিযোজন ক্ষমতা তাকে সকল প্রাণী থেকে আলাদা করেছে এবং উন্নত করেছে। উটের এই
ক্ষমতা মরুভূমিতে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমরা এতক্ষন উটের অভিযান ক্ষমতা
সম্পর্কে জানছিলাম। এখন আমরা জানবো উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা।
উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা
উট যেমন উপকারী প্রাণী। তেমন উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা অনেক রয়েছে আমরা
ধীরে ধীরে তা আলোচনা করবো। চলুন আমরা একসাথে উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা
সম্পর্কে জানি
- পুষ্টির উৎসঃ উটের মাংস অনেক পোস্টটি গুনে ভরা। যেমন প্রোটিন ভিটামিন বি-১২ ভিটামিন বি-৩ খনিজ থাক লোহা ও জিঙ্ক ইত্যাদি থাকে। এগুলো শরীরের বেশি গঠনের সাহায্য করে থাকে।
- ক্যালরি ও চর্বিঃ উটের মাংসে ক্যালোরি ও চর্বির পরিমাণ সাধারণত কম থাকে। এর ১০০ গ্রাম মাংসে সাধারণত ১২৫ থেকে ১৫০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে। উটের মাংসে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে; এই কারণে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল মানুষ এই উটের মাংস ভক্ষণ করতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ উটের মাংস রান্না করার পরে অনেক সুস্বাদু এবং কিছুটা ক্যালোরি ও চর্বির পরিমাণ কমে যায়। উটের মাংস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উটের মাংসে এক ধরনের প্রোটিন থাকে যা পাচনতন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ গবেষণায় দেখা গেছে উটের মাংস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
এতক্ষন আমরা জানছিলাম উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা। এখন আমরা জানবো উটের দুধের
উপকারিতা৷
উটের দুধের উপকারিতা
উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা যেমন অনেক বেশি তেমনি উটের দুধের উপকারিতা অনেক
বেশি। চলুন আপনাকে এখন উটের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করি।
আরো পড়ুনঃ
বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
- পুষ্টিগুনঃ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন উটের দুধে অত্যাধিক পরিমাণে প্রোটিন ভিটামিন সি ভিটামিন বি রয়েছে ও মিনারেল, যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কম ফ্যাটঃ তুলনামূলকভাবে মেয়ের দুধের চেয়ে উটের দুধে ফ্যাট ও ল্যাকটোজের পরিমাণ অনেক কম। ফলে সাধারণ মানুষ এটি অতি সহজে গ্রহণ করতে পারে।
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় উটের দুধ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
- হার্টের সুরক্ষাঃ উটের দুধে পরিমাণে ফেটে এসিড থাকায় এটি হার্টের ক্ষতি করে না। এটিতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্টের জন্য উপকারী।
- আল্যার্জি প্রতিরোধঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে উটের মাংস কিছু কিছু ক্ষেত্রে এলার্জি প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।
উটের দাম কত হয়
উটের দাম ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তন হতে পারে। একটি সাধারণ উটের দাম হয় বাংলাদেশি
টাকায় ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। একটি ভালো মানের বা উচ্চ বংশের উটের দাম অনেক বেশি
হয়ে থাকে। যারা উন্নত মানের দুধ দেয় তাদের দাম সাধারণত বাংলাদেশি টাকায় ১৫ থেকে
৫০ লাখ অবধি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ
ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তির দোয়া
উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা বেশি হওয়ায় এই উট আরব দেশে অনেক বেশি লালন পালন
করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মানুষ উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে খুব
একটা বেশি জানে না তাই এই আর্টিকেল টা পড়লে আপনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞ্যান
অর্জন করতে পারবেন।
মাংস খাওয়া ছাড়া একটি উন্নতমানের উটের দাম যেগুলা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয় সেগুলার
দাম বাংলাদেশি টাকায় ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি অবধি হতে পারে।
সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়কর সৃষ্টি উট
আমরা উপরের লিখা থেকে উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি
এটাও মহান সৃষ্টিকর্তার একটা বিস্ময়কর সৃষ্টি। উটের শরিরের অভ্যান্তরীণে প্রায়
১৫০ লিটার পানি রিজার্ভ করে রাখতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায়
এবং কয়েক সপ্তাহ পানি না খেয়ে কাটাই দিতে পারে। এদের চোখ তিন স্তরে সৃষ্টি
করেছেন মহান রাব্বুল আলামিন;যা ধুলাবালি ও মরুভূমির বালি ঝড় থেকে রক্ষা করে। এমন
কি উট কাটাযুক্ত খাবার খেতে সক্ষম । উঠে শরীরের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস
থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে যা অত্যাধিক গরম উটকে বেঁচে থাকতে
সাহায্য করে।
এই সকল বিস্ময়কর সৃষ্টির মধ্যে উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা আরো এক বিস্ময়কর
সৃষ্টি মহান সৃষ্টিকর্তার। উট শুধুমাত্র মরুভূমিতেই টিকে থাকে এমন নয়,
সংস্কৃতিতে ,অর্থনীতিতে ও পরিবহনের অনেক ভূমিকা পালন করে।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানালাম উটের মাংসের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
আরো জানিয়েছি সৃষ্টিকর্তার এই বিস্ময়কর সৃষ্টি উট সে সম্পর্কে। আশা করি
আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে।
আপনি জেনেছেন এখন আপনার পরিচিতজনদের জানিয়ে দেবার জন্য আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।
এবং এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url