দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা - দুম্বা পালনে সুবিধা

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সে রকম ভাবে দুম্বার মাংস খেতে পারে না তার কারণ হলো বাংলাদেশে এখনো গরু মহিষের মত দুম্বার মাংস সচরাচর বিক্রি হয় না। তবে আপনারা অনেকেই জানতে চান দুম্বার মানুষের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। আমার এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারবেন।
দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা

দুম্বার মাংসের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে অনেকে আছেন যারা দুম্বার মাংস খেতে পছন্দ করেন না। আসুন দুম্বার মাংসের গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানিয়ে দিই।

ভুমিকাঃ

সাধারণত দুম্বা হল ভেড়ার একটি প্রজাতি। যা মূলত ইরাক ইরান সৌদি আরব আফগানিস্তান তাজাকিস্তান কাজাকস্থান পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও পাওয়া যায় । এটি চেনা যায় তার পেছন দিকের বিশেষ চর্বিযুক্ত লোমের কারণে। অনেকেই দুম্বা ও ভেড়াকে একসাথে গুলিয়ে ফেলি কিন্তু দুম্বার পেছনে বিশেষ যে চর্বিযুক্ত অংশ থাকে তা ভেড়ার ক্ষেত্রে থাকেনা।
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানার । এই লিখাটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন আমরা একসাথে দুম্বার মাংসের ও গুণাগুণ উপকারিতা জানি।

দুম্বার পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

দুম্বার উৎপত্তিঃ দুম্বার উৎপত্তি নিয়ে সঠিক তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয় সাধারণত দুম্বা ইরান বা সৌদি আরব থেকে উৎপত্তি হয়েছে ।কয়েক বছর আগেও এটি বাংলাদেশের ঠিক মত পাওয়া যেত না কিন্তু এখন এটি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, এটা জানার যে দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।

দুম্বার লেজঃ দুম্বাকে ভেড়া থেকে আলাদা করার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তার লেজ। লেজটি পেছনের দিকে অনেক বেশি বর্ধিত এবং সেখানে অধিক পরিমাণে চর্বি থাকে। মহান সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব নিয়ামত তাদের এই লেজ এই লেজের কারণে প্রতিকূল পরিবেশেও তারা টিকে থাকতে পারে ।
বিজ্ঞানীরা জানান যে এই চর্বিতে সাধারণত দুম্বার প্রয়োজনের থেকে বেশি হয়ে যাওয়া পুষ্টিগুণ অবশিষ্ট হিসেবে থেকে যায় যা প্রতিকূল পরিবেশে দুম্বাকে বাঁচতে বা টিকে থাকবে সাহায্য করে। দুম্বার লেজে অংশটুকু না করার পরে তা খাবারে এক ধরনের বিশেষ রসালো একটি ফ্লেভার যোগ করে যা দুম্বার মাংসের স্বাদ আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে দেয়।

আমরা এখন জানতে চলেছি দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। এটি জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে ।

বাংলাদেশে দুম্বা পালন ও বিক্রয়ঃ

বাংলাদেশে লম্বা জনপ্রিয়তা পেয়েছে কুরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে । দুম্বা জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঢাকায় বসবাস করা কিছু ধনী ব্যক্তিদের জন্য। গত দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকার কিছু ধনী ব্যক্তিবর্গ কোরবানির উদ্দেশ্যে কিছু দুম্বা আমদানি করেন।

তারপরে এটি অনেকের কাছে যোগ্যতা পায়। মধ্যপ্রাচ্য বা ইরান ইরাক এদিক থেকে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা শুরু হয়। তখন বাংলাদেশের মানুষ দুম্বার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে। কিছু কিছু খামারি ও ব্যবসায়ীরা যখন দেখে যে প্রতিবছরই অনেক বেশি পরিমাণে দুম্বা আমদানি করতে হচ্ছে;তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে বাংলাদেশে কিভাবেদুম্বা পালন করা যাবে।
প্রথমের দিকে দুম্বার মাংস আমদানি করে বাজারজাত করা হত। অতঃপর আস্তে আস্তে দুম্বার বাচ্চা নিয়ে আসা হলো বাংলাদেশ। এখন ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরকেন্দ্রিক যে কোরবানির হাট গুলো বসে তাতে অনেক বেশি পরিমাণে দুম্বাপাওয়া যাচ্ছে।

যদিও বাংলাদেশের আবহাওয়া দুম্বা পালনের জন্য খুব একটা উপযোগী নয়। তারপরেও কিছু উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীগণ অল্প পরিসরে তুম্বা কাজ শুরু করেছেন এবং তারা অনেকে সফলতাও পেয়েছেন।

বাংলাদেশি কৃষকদের জন্য দুম্বা পালন পদ্ধতি

জাত নির্বাচন বাংলাদেশের চাষযোগ্য কয়েকটি উন্নত মানের দুম্বার জাত হল বাঙ্কারি দুম্বা,শর্ট-ফ্যাট টেইল্ড দুম্বা,কাজাক দুম্বা, পাকিস্তানি দুম্বা, তাজিক দুম্বা ও নবাবী দুম্বা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশি কৃষকদের জন্য দুম্বা পালন পদ্ধতি


এগুলো চাষ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এ সকল জাতগুলোর রোগ হওয়ার প্রবণতা খুবই কম এবং যেকোনো পরিবেশে এরা খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম এবং এসব দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা অনেক বেশি।

উপযুক্ত স্থানে খামার নির্বাচন করাঃ সাধারণত দুম্বার খামারটি প্রাকৃতিক পরিবেশে আশেপাশে হওয়া অত্যন্ত ভালো। দুম্বা সাধারনত অত্যাধিক গরম এবং অত্যাধিক ঠান্ডা সহ্য করতে পারে। দুম্বার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দুম্বার খামারে যেন সঠিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে।

দুম্বার খাওয়ার জন্য আমাদের ভিতরে তৃণভাস লতাপাতা ইত্যাদি লাগাতে হবে। নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ছেলেটার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাকি স্থান ফাকা রাখতে হবে। খামারটি সব সময় পরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তবেই আমরা সঠিকভাবে দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা পাব।

দুম্বা পালনে সুবিধাঃ

বাংলাদেশে দুম্বা পালন অতটা জনপ্রিয় হয়নি এখনো পর্যন্ত। তবে দুম্বা পালনে বেশ কয়েকটি সুবিধা ও লাভ রয়েছে। চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক দুম্বা পালনের সুবিধাগুলো নিয়েঃ

মাংস উৎপাদনঃ দুম্বা পালন করে অনেক বেশি মাংস উৎপাদন করা যায়। দুম্বা খুব অল্প সময়ে বড় হয় এবং অধিক পরিমাণে মাংস দেয়। এই আর্টিকেলটি পড়লে আমরা জানতে পারবো দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
দুধ উৎপাদনঃ কিছু কিছু প্রজাতির দুম্বা থেকে অধিক পরিমাণে দুধ পাওয়া যায়। যা আমাদের শারীরিক চাহিদার ঘাটতি পূরণ করে থাকে। দুম্বার দুধে প্রোটিন ভিটামিন ল্যাকটোজ ক্যালসিয়াম ইত্যাদি থাকে। বর্তমানে দুম্বার দুধ ময়শ্চারাইজার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যা চুল ও ত্বক কে মসলিণ করে।

আর্থিক লাভঃ দুম্বা তুলনামূলক ছোট প্রাণী হওয়ায় একটি অল্প জায়গায় অল্প পরিসরে পালন করা যায়। দুম্বা সাধারনত ঘাস পাতা ইত্যাদি খাই যেগুলো কম খরচেই পাওয়া যায় । দুম্বার মাংসের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি হওয়ায় তা অনেক লাভে বিক্রি করা য বেশি লাভবান হওয়া যায়।

দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতাঃ

মধ্যপ্রাচ্যে ও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে দুম্বার মাংসের জনপ্রিয়তা অত্যাধিক। চলুন আমরা জেনে নি দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা

ক্যালরি ও উপকারিতাঃ দুম্বার মাংসের বেশি পরিমাণে চর্বি থাকার কারণে এটির ক্যালরি অনেক বেশি। দুম্বার মাংসে ক্যালরি থাকে ২৯৪- ৩০০ গ্রাম। ১০০ গ্রাম মাংসে সাধারণত প্রোটিন থাকে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম। এই প্রোটিনে অধিক পরিমাণে এমাইনো এসিড থাকার ফলে এটি শরীরের বিভিন্ন ক্ষত পূরণ করে।
দুম্বার মাংসে ভিটামিন পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভিটামিন বি। ১০০ গ্রাম দুম্বার মাংসে দুই থেকে চার মাইক্রগ্রাম ভিটামিন বি থাকে। এবং আরো একটি ভিটামিন থাকে সেটি হল ভিটামিন বি সিক্স এটি খুবই অল্প পরিমাণে থাকে যার পরিমাণ ১০০ গ্রামে ০.২ হতে ০.৪ মিলিগ্রাম । 
দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা

এছাড়াও ভিটামিন বি টু ও ভিটামিন B3 থাকে। যা শরীরের রক্তের কোলেস্টেরল ও ত্বকের মসৃণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানলাম এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে যা হলো ১০০ গ্রাম দুম্বার মাংসে ২.৫ হতে চার মিলিগ্রাম আয়রন থাকে যা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করে থাকে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক ভাবে গঠনে সাহায্য করে থাকে।

দুম্বার ১০০ গ্রাম মাংসে জিংকের পরিমাণ চার মিলিগ্রাম। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য এবং দুম্বার শরীরের প্রতিটা কোষের সঠিক বন্টনের জন্য এই জিংক এর পরিমাণ সঠিক পরিমাণে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।দুম্বার ১০০ গ্রাম মাংসে সিলোনিয়াম থাকে ২০ থেকে ৪০ মাইক্রো গ্রাম।

যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং সেলের গঠনে সাহায্য করে। দুম্বার ১০০ গ্রাম মাংসে ফ্যাটের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবে থাকে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম তবে এটি শরীরের বিভিন্ন অংশের ভিন্নতা অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে। আমরা জানলাম দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।

দুম্বার মাংসের অপকারিতাঃ

আমরা জানি যে দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে চলুন আমরা কয়েকটি অপকারিতা জেনে আসি। দুম্বার মাংসে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট থাকায় এটি স্ট্রোকের ধুঁকি বাড়ায়। 
এবং অধিক পরিমাণে চর্বি হওয়ায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে দেখা গেছে এটি হজম হতেও সময় নিয়ে থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকায় তা রক্তচাপ বাড়ায়। তাই দুম্বার মাংস গ্রহনের সময় আমাদের এসব বিষয়গুলা খেয়াল রাখতে হবে ।

শেষকথাঃ

আমরা জানলাম দুম্বার মাংসের গুনাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। দুম্বার মাংস পুষ্টিকর ও গুণাগুণ সম্পন্ন খাদ্য। তাই আমাদের উচিত বাংলাদেশে উন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করে দুম্বা পালন করা। যাতে করে আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টিগুণ চাহিদা পূরণ হয়।

আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। এবং এরকম মজার মজার বিষয় জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। ধন্যবাদ ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url