চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় - ঘুমালে কি ডার্ক সার্কেল দূর হয়

আমরা কমবেশি সবাই আমাদের সৌন্দর্য নিয়ে অনেক সচেতন। তবে চোখের নিচে কালো দাগের কারণে আমাদের চেহারার সৌন্দর্য কিছুটা কমে যায় এবং নিজের উপর কনফিডেন্স অনেক কম হয়ে পড়ে। এজন্যই আপনারা অনেকেই জানতে চান চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় এবং ঘুমালে কি ডার্ক সার্কেল দূর হয় কিনা সে সম্পর্কে। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয়

আমরা অনেকেই মনে করি না ঘুমানোর ফলে কিংবা কম ঘুমানোর ফলে চোখের নিচে কালো দাগ হয়। কথাটি সঠিক কিনা এবং বিজ্ঞান কি বলে এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কি বলে সে সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন।

ভূমিকা

আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো মুখ। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো আমাদের চোখ। চোখ সুন্দর থাকলে চেহারাও সুন্দর দেখতে লাগে। আমাদের চোখের নিচে প্রাকৃতিক কারণে, কিংবা অযত্নের কারণে চোখের নিচে অনেক সময় দাগ পড়ে যায়। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় এই সম্পর্কে কিছু কার্যকর তথ্য দিব।

বরফ খেলে কি ডার্ক সার্কেল কমে

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে আসি বরফ খেলে কি ডার্ক সার্কেল কমে। বরফ খেলে ডার্ক সার্কেল কমে এটা নিয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মাঝে মাঝে বরফ ব্যবহারে ডার্ক সার্কেল কমতে দেখা গেছে। চলুন সে সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য আপনাকে আমি জানাই।
  • আইস বার ব্যবহার করেঃ সরাসরি বরফ না লাগিয়ে বরফের টুকরা একটি সুতোর কাপড়ের পেচিয়ে ডার্ক সার্কেল বা কালো দাগ যুক্ত স্থানে ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখলে তা থেকে উপকার পাওয়া যায়।
  • ঠান্ডা চামচ এর ব্যাবহারঃ ফ্রিজে কোনো একটা চামচ কিছুক্ষণ রেখে টিস্যু দিয়ে পেচিয়ে বা খালি চামচ চোখে লাগিয়ে পাচ থেকে দশ মিনিট রেখে দিলে ব্যাবহার করলে ডার্ক সার্কেল কমে যায়!
  • ঠান্ডা পানিঃ বরফের পানি বা ঠান্ডা কিছু দিয়ে মুখ ধুলে আলতো করে চোখের চারপাশে ঝাপটা মারলে ডার্ক সার্কেল থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ক্রিম

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে আসি বাংলাদেশে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চোখের নিচের দাগ দূর করার সম্পর্কে।
  • ACI Aura Eye Gel: বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি ক্রিম যা চোখের নিচের ফোলা ভাব এবং চোখের নিচের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • Pax Moly Real Eye Cream For Face: এটি একটি বিখ্যাত কোরিয়ান ব্রান্ড যেটি বর্তমানে বাংলাদেশে বহুল ব্যাবহৃত হয় । এই ক্রিমে ভিটামিন সি এবং পেপ টাইড যা আমাদের শরিরের যেকোনো যায়গার কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • Herbion naturals brightening Eye Cream: এটি একটি ওষধি গুনসম্পুর্ণ ভেজষ উপাদান সমৃদ্ধ এটিও চোখের নিচে দাগ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • Neem Original Under Eye Cream: এটির মুল উপাদান নিম। চোখের নিচের কালো দাগ সহ অন্য যোকেনো স্থানের কালো দাগ দূর করতে এই ক্রিম টি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
  • Glow & Lovely Anti Dark Circle Cream: এটি ফেয়ার এন্ড লাভলির একটি ভ্যারিয়েন্ট যেটি মুখের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে থাকে। এটি নিয়মিত ব্যাবহারের ফলে অনেক উন্নতি লাভ করা যায় এবং এটার মুল্য অনেক সাশ্রয়ী।
  • Bioderma Sensibio Eye Contour Gel: এটি সাধারণত ফ্রান্সের পন্য তারপরেও এটা বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এটি ত্বক কে হাইড্রেটেড রাখে এবং ত্বক কে কালো দাগ থেকে রক্ষা করে থাকে।
  • Skin Cafe Brightening Eye Cream: এই ক্রিম টি বাংলাদেশি। এটি বাংলাদেশে খুব বেশি ব্যাবহৃত হয়। এটাতে এলোভেরা থাকার কারণে ত্বক কে ময়েশ্চার করে রাখে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • নোমার্কস ক্রিমঃ আয়ুর্বেদ জাতিয় একটা ওষুধ এই ক্রিম টি কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

চোখের নিচে কালো দাগ ও গর্ত দূর করার উপায়

উপরে আমি আপনাকে চোখের নিচের দাগ দূর করার ক্রিম সম্পর্কে জানালাম। এখন জানাবো চোখের নিচে কালো দাগ ও গর্ত দূর করার উপায়। চলুন তা নিয়ে বিস্তারিত জানায়
  • পর্যাপ্ত ঘুমঃ আমাদের শরীরের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রয়োজন। একজন মানুষ কে স্বাভাবিক ও সুস্থ থাকতে দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম না হলেই আমাদের চোখের নিচের ত্বক গুলা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাতে নিচে দাগ পড়ে যায় এবং গর্ত হয়ে যায়।
  • বরফ প্রয়োগঃ চোখের নিচে দাগ পড়ে যাওয়ার পরে ঠান্ডা পানিতে চোখ পরিষ্কার করা বা বরফের টুকরাগুলো কাপড়ে পেঁচিয়ে চোখের নির্দিষ্ট ও কালো যুক্ত স্থানে স্পর্শ করলে কালো দাগ ও গর্ত দূর হয়।
  • পানি পান করাঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীরের ত্বকের প্রতিটি টিস্যু কর সুস্থ থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত সঞ্চালন ঘটে এর ফলে শরীরের কোন অংশে দাগ পড়ে না।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করাঃ শাক সবজির পাশাপাশি ভিটামিন সি ভিটামিন ই ও ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ত্বককে পুষ্টি যোগায় যা শরীরের অনেক জায়গার দাগ কমাতে সাহায্য করে।
  • শসা ও আলুর রস ব্যাবহার করাঃ আমরা জানি শসা ও আলুর রস সাধারণত ব্লিচ হিসাবে কাজ করে থাকে। শসা ও আলুর রস একসাথে মিশ্রিত করে ১৫ মিনিট চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন অতঃপর ঠান্ডা ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে।
চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় জানতে নিচে স্ক্রল করুন।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম চোখের নিচে কালো দাগ ও গর্ত দূর করার উপায় হয় সম্পর্কে এখন জানাবো চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়।
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

  • ১. ঠান্ডা টি ব্যাগঃ চায়ে থাকা উপাদান আমাদের শরীরের ত্বকের ভেতরের রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। আমরা আমাদের ব্যবহৃত টি ব্যাগ টি ফ্রিজে রেখে তা আপনার চোখের নিচে বা দাগ যুক্ত স্থানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এটি চোখের দাগের সাথে সাথে চোখের ফোলা ভাব কমায়।
  • ২.নারিকেল তেলঃ নারকেলের তেলে এমন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কে মশ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে। ঘুমানোর আগে নারকেল তেল চোখেরর নিচে অল্প করে লাগালে চোখের কালো দাগ দূর হয়।
  • ৩.মধুঃ মধুতে অধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে তা আমাদের শরীরকে এবং ত্বককে ময়েশ্চার করে রাখে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে চোখের নিচে মধু লাগিয়ে ঘুমালে আমাদের চোখ এর নিচের কালো দাগ দূর হয়।
  • ৪. দুধ ও গোলাপ জলঃ দুধ ও গোলাপজল একসাথে মিক্স করে চোখের নিচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়।
  • ৫. অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল আমাদের ত্বকে মশ্চারাইজ করে রাখে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জেল আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল করে। প্রতিদিন এটি ব্যবহার করুন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত একটু ধৈর্য করে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি তাহলে আপনি জানতে পারবেন চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয়।

ঘুমালে কি ডার্ক সার্কেল দূর হয়

ঘুম আমাদের শরীরের জন্যে অনেক উপকারী। ঘুম আসলে আমাদের ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে শরীরের ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়। চোখের আশে পাশের রক্তের সঞ্চালন কমে যায় এবং এই কারণেই ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়। 
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যা চোখের নিচের রক্তনালীতে আরো স্পষ্ট হয় এতে করে দাগ বা ডার্ক সার্কেল দেখা যায়। শরীরের হরমোন কার্টিসেলের মাত্রা অনেক বেশিই পরিমাণে কমে যায় যার ফলে শরীরের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও ও আদ্রতা বৃদ্ধি করে তা ত্বকের ক্ষতি করে এই কারণে ডার্ক সার্কেল হয়। 

ঘুম ত্বক কে পুনঃনীবরকরণে সাহায্য করে যাতে করে ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঘুম কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় যা আমাদের দেহের ত্বক কে মসৃণ করে তোলে। ঘুম আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা আমাদের শরীরের টোন কে উজ্জ্বল রাখে এবং ডার্ক সার্কেল কমায়। 

ঘুম আমাদের শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে যা ত্বকের চোখের আশে পাশের সকল ত্বক কে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে৷ ঘুম আমাদের শরীর কে স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং সঠিক পুষ্টি প্রদান করে থাকে। 
ঘুমালে কি ডার্ক সার্কেল দূর হয়

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম ঘুমালে কি ডার্ক সার্কেল কেউ কমে যায় একটু পরেই আমি আপনাকে জানাবো চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় সম্পর্কে।

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয়

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়লে মানুষকে দেখতে একটু অস্বাভাবিক দেখায়। আমাদের সমাজে ডার্ক সার্কেল নিয়ে অনেক ধরণের ভুল ধারণা রয়েছে। চলুন আমি আপনাকে জানাই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয়।
  • পানি শুন্যতাঃ আপনার শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকলে চোখের আশেপাশের ত্বকগুলা শুকিয়ে যেতে পারে এবং সেই কারণেই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যায় কারণ ঘুম ঠিক মতো না হলে বা পর্যাপ্ত না হলে চোখের নিচের ব্যাহত হয় এই কারণে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে।
  • বয়স বৃদ্ধিঃ বয়স বাড়লে আপনার ত্বকের স্তর পাতলা হয়ে যায়। ত্বকের স্তর পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে চোখের নিচের স্পটগুলো সবগুলো দেখা যায় এ কারণে ডার্ক সার্কেলের মত লাগে।
  • জিনগত কারণঃ ডার্ক সার্কেল এর সমস্যা টি জিনগত কারণেও হয়ে থাকে অনেকের পরিবারে এই সমস্যাটি থেকে থাকে এর কারণে পরিবারের সকলেরই সমস্যাটি দেখা যায়।
  • মানসিক চাপঃ মানসিক চাপ ও বিভিন্ন প্রকার টেনশনের কারণে মানুষের রক্ত চলাচল এ বিঘ্ন ঘটতে পারে এই কারণেই ত্বকের নিচের পোস্টগুলো শুকিয়ে যায় এবং এবং ডার্ক সার্কেল দেখা যায়।

শেষ কথা

এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন হয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি আশা করি আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন এবং নিয়মিত এরকম প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন একবার হলেও ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url