কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় ? খাবারের সাথে কিশমিশ ব্যবহারের উপায়
আমরা সবাই চাই নিজেকে যেন সুন্দর দেখায়। অনেকেই এডাল্ট হওয়ার পর ও নিজের
স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। অনেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও প্রয়োজন অনুযায়ী মোটা হন না। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হয়তো আপনিও জেনেছেন কিসমিস খেলে
মোটা হওয়া যায়। এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন খাবারের
সাথে কিসমিস ব্যবহারের উপায় সমূহ।
কিসমিস অনেক সুস্বাদু ফল এবং এটি আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। শরীরের বিভিন্ন
ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ যোগায়। আমাদের সকলের উচিত প্রত্যেকদিন অল্প
পরিমাণে হলেও কিসমিস খাওয়া।
ভূমিকা
কিশমিশ একটি ছোট্ট ফল। আপনি, আমি, বেশিরভাগ বাঙালীদের মিষ্টি জাতীয় খাবার অনেক
পছন্দের। আমরা কিশমিশকে শুকনো আঙুর হিসাবে চিনেছি। এই শুকনো ফলের স্বাদ অনেক
মিষ্টি কিন্তু শুধু এটি এর স্বাদের জন্যে বিখ্যাত না ,এটির রয়েছে বহু পুষ্টিগুণ ও
উপকারিতা।এই আর্টিকেল টি আমি আজকে আপনাকে জানাবো কিশমিশ কিভাবে খেলে মোটা হওয়া
যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
শুকনো কিশমিশ খেলে কি হয়
শুকন কিশমিশ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে আমাদের শরীরের জন্যে। এতে প্রচুর পরিমাণে
পুষ্টি উপাদান রয়েছে। শুকনো কিশমিশের অন্যতম উপকারিতা হলো আমাদের শরীরের শক্তি
বৃদ্ধি করে।
কিশমিশ কে প্রাকৃতিক চিনি বলা হয় কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি অর্থাৎ গ্লুকোজ ও
ফ্রুক্টোজ থাকে যা আমাদের শরীরে অনেক শক্তি যোগায়। শুকনো কিশমিশ রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শুকনো কিশমিশে অত্যাধিক পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা
শরীরকে রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ
ব্যালন ডি অরের পর্দার পেছনের গল্প
শুকনো কিশমিশে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটি আমাদের দেহের হাড় কে মজবুত ও শক্তিশালী
করে রাখে। শুকনো কিশমিশে পটাশিয়াম থাকায় তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। কিশমিশ
আরো অনেক উপকার করে।কিছুক্ষণ পরে আমি আপনাকে জানাবো কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায়
কিভাবে ।
কিশমিশ খেলে কি মোটা হয়
হ্যা কিশমিশ খেলে আপনার শরীর মোটা হতে পারে এটি নির্ভর করে কিশমিশ কি পরিমাণে
খাচ্ছেন আপনি। কিশমিশ একটা প্রাকৃতিক শর্করা জাতীয় খাবার । এতে প্রাকৃতিক চিনি ও
ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে।
উপরে আমি আপনাকে জানিয়েছি কিশমিশে ফুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে যা আমাদের শক্তি সরবরাহ
করে থাকে। ১০০ গ্রাম কিশমিশে প্রায় ২৯০ থেকে ২৯৯ ক্যালরি থাকে যা অন্য যেকোনো
খাদ্যের ক্ষেত্রে কল্পনা করাও যায় না।
এত পরিমাণ ক্যালরি থাকায় যদি এটি আপনি অধিক পরিমাণে খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীর
মোটা হয়ে যাবে।আবার কিশমিশে অত্যাধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে থাকে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে থাকে এর জন্যে বেশি পরিমাণে
কিশমিশ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে, আপনি মোটা হয়ে যেতে
পারেন।
কিশমিশ খেলে অনেকে মোটা হয়ে যায় আবার কিশমিশ খেয়ে অনেকে মোটা হতে চাই। আপনি যদি
জানতে চান কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে তাহলে এই আর্টিকেল টি মনোযোগ
সহকারে পড়ুন।
প্রতিদিন কিশমিশ খেলে কি হয়
কিশমিশ আমাদের শরীরের জন্যে অত্যান্ত উপকারী একটা ফল। এটা আমাদের প্রত্যহ খাওয়া
উচিত। কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে তা জানার আগে চলুন আমি আপনাকে জানাই
প্রতিদিন কিশমিশ খেলে কি হয়। কিশমিশ আপনাকে নিয়ম করে পরিমাণ মত খাওয়া
উচিত।
এই কিশমিশ আপনার শরীরের রক্ত সল্পতা কমাতে সাহায্য করে। কিশমিশে আয়রন থাকার কারণে
এটি প্রতিদিন পরিমাণ মত গ্রহণ করলে আমাদের শরীরকে এনিমিয়া থেকে রক্ষা করতে
সাহায্য করে। কিশমিশে ক্যালশিয়াম ও আয়রন থাকার কারণে আমাদের শরীরের হাড়ের সাথে
মিশে আমাদের শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
বিশেষ করে যারা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে তাদের জন্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ গ্রাম
কিশমিশ খাবার হিসাবে গ্রহন করা উচিত। কিশমিশ এর আরেকটি উপকারিতা হলো ত্বক ও চুলের
স্বাস্থ্য রক্ষা করে। কিশমিশ ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
হৃদপিণ্ডের রোগ এর ঝুকি হ্রাস করে কিশমিশ। রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে আপনাকে সুস্থ
থাকতে সাহায্য করবে কিশমিশ। এর জন্যে আপনার প্রতিদিন কিশমিশ খাওয়া উচিত।
কিশমিশ পানি কি লিভারের জন্য ভালো
কিশমিশ পানি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে এবং লিভারের জন্য তা
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাতে এক মুঠো কিশমিশ ভিজিয়ে রেখে সকালে তার পানি পান করলে
অনেক উপকার পাওয়া যায়। ভিজিয়ে রাখা পানি মুলত রক্ত পরিস্কার করতে সাহায্য
করে।
আরো পড়ুনঃ
বুয়েটে চান্স পাওয়ার টিপস
কিশমিশ পানিতে বিদ্যমান ভিটামেন ও মিনারেল রক্ত পরিশোধিত করতে সাহায্য করে যাতে
করে রক্তের টক্সিন কমে যায় এবং রক্ত সুস্থ থাকে। কিশমিশ পানি তে থাকা উপাদান
লিভারের কোষ কে উজ্জিবীত করে এবং সুসংগঠিত হতে সাহায্য করে যা লিভার কে অনেক
ধরনের ক্ষতিকর রোগ থেকে রক্ষা করে।
কিশমিশ ভিজানো পানির আরেকটি অন্যতম কাজ হলো পাচন তন্ত্র এর কাজ কে গতি শীল করে
তোলা। পাচন তন্ত্র কে গতিশীল করতে কিশমিশ এর ফাইবার কণা সাহায্য করে থাকে।
প্রতিদিন আপনার এই পানি পরিমান মত খাওয়া উচিত। একটু পরে আপনাকে জানাবো কিশমিশ
খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
খাবারের সাথে কিশমিশ ব্যবহার
কিশমিশ অনেক খাবারের সাথে ব্যবহার করা যায়। আমি আপনাকে এখন জানাবো কিছু খাবারের
সাথে কিশমিশের ব্যবহার। বাংলাদেশের কিছু কিছু জেলায় পোলাও ভাত এর সাথে কিশমিশের
ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও আপনি রোস্ট এবং গরুর মাংসের সাথে কিশিমিশ এর ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ
করে কোরমা পোলাও ইত্যাদিতে কিশমিশ ব্যবহার করলে এটি মুখরোচক ও সুস্বাদু হয়। আবার
অনেক ক্ষেত্রে সালাদেও কিশমিশ ব্যবহার করা হয়।
এটি সালাতকে একটু মিষ্টতা দেয় যা অনেক মানুষ খেতে পছন্দ করে আপনি যদি সালাদের
সাথে মিষ্টি জাতীয় কিছু পছন্দ করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি কিশমিশ ব্যাবহার করতে
পারেন। বাংলাদেশের কিশমিশের বিপুল ব্যবহার দেখা যায়
আরো পড়ুনঃ
এন্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে
মিষ্টান্ন ভান্ডারে বিশেষ করে সেমাই ফিরনি হালুয়া কেক পুডিং ইত্যাদিতে কিশমিশ
ব্যবহার করা হয় এটি প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হওয়ায় খাবার কে সুস্বাদু করে তোলে।
খাবারের সাথে কিশমিশের ব্যবহার সম্পর্কে আমি আপনাকে জানালাম এর পাশাপাশি আমি
আপনাকে জানাবো কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে।
কিশমিশ ভিজানো পানি খেলে কি ত্বক উজ্জ্বল হয়
কিশমিশ ভিজানো পানি আমাদের ত্বককে সুস্থ ও সজীব রাখতে সাহায্য করে৷ কিশমিশ খেলে
মোটা হওয়া যায় কিভাবে এ সম্পর্কে জানানোর আগে আমি আপনাকে জানাই কিশমিশ ভেজানো
পানি আমাদের শরীরে কিভাবে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। কিশমিশ ভেজালে কিশমিশের ভেতরের
কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পানির সাথে মিশে গিয়ে আমাদের দেহের অনেক উপকার করে
থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ
- বয়সের ছাপ নিয়ন্ত্রণঃ কিশমিশ অনেক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি পানির সাথে মিশে যায় এবং এটা যখন আমরা পান করি এটি আমাদের ত্বকের ফাইন লাইন ও দাঁগ কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ
মেডিটেশন কিভাবে চেহারা সুন্দর করে
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ ভিটামিন সি ও আয়রন কিশমিশে থাকার কারণে যখন পানিতে মেশানো হয় বা ভেজানো হয় তখন কিশমিশের পানির মধ্যে ভিটামিন সি ক আয়রন মিশে যায় এবং তা পান করলে আমাদের ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে এবং এবং ত্বকের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে।
- ব্রণ কমায়ঃ কিশমিশে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাঙ্গাস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি সহজে পানিতে মিশে যায় এবং আমাদের মুখে ব্রণের হাত থেকে রক্ষা করে।
আমি আপনাকে জানালাম কিশমিশ ভেজানো পানি কিভাবে আমাদের ত্বক কে উজ্জ্বল রাখে । এখন
আমি আপনাকে জানাবো কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে।
কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে
মোটা হওয়ার জন্য কিশমিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। কিশমিশের পাশাপাশি কেউ যদি
সুষম খাবার গ্রহণ করে সে খুব সহজেই মোটা হয়ে যেতে পারবে। চলুন আমি আপনাকে এখন
বিস্তারিত জানাই কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে।
- কিশমিশ ভিজিয়ে খাওয়াঃ প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ১০ থেকে ১৫ টি কিশমিশ নিয়ে হালকা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে সেই কিশমিশ ভেজানো পানিটুকু পান করতে হবে। তারপরে আস্তে আস্তে কিশমিশগুলো খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন কিশমিশ খেলে আপনি সুস্বাস্থ্য ও মোটা হতে পারবেন।
- প্রতিদিন কিশমিশ পরিমাণ মত খাওয়াঃ আমি উপরে আপনাকে জানিয়েছি কিশমিশে অনেক পরিমাণে ক্যালরি থাকে এর জন্য কিশমিশ প্রতিদিন একই পরিমাণে খাওয়া উচিত। পরিমাণ যদি উঠানামা করে সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে। এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে কিশমিশ প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের জন্য ২০ থেকে ৩০ গ্রাম কিশমিশ খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ
এন্টিবায়োটিকের বিকল্প থেরাপি
- বিভিন্ন খাবারের সাথে কিশমিশের মিশ্রণ রাখাঃ আপনি বিভিন্ন খাবারের সাথে কিশমিশের মিশ্রণ রাখতে পারেন যেমন পোলাও কোরমা দধি পায়েশ ইত্যাদিতে আপনি কিশমিশ ব্যবহার করতে পারেন এটি যেমন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করবে তেমনি আপনার শরীর কেও পুষ্টি যোগাবে।
- কিশমিশ ও মধুর মিশ্রণঃ কিশমিশ এ অধিক পরিমাণে ক্যালরি থাকে এটিও একটি প্রাকৃতিক ফল তেমনি মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেটি অন্য কোন ভাবে তৈরি করা সম্ভব নয়। কিশমিশ ও মধু এই দুইটিতে অধিক পরিমাণে ক্যালরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে এবং আপনাকে মোটা হতে সাহায্য করবে।
- কিশমিশ ও কলাঃ কিশমিশ ও কলা একসাথে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই দুইটিতেই প্রাকৃতিকভাবে গ্লুকোজ ও ফ্রকটোজ থাকার কারণে অত্যাধিক পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায় এতে করে দেখা যায় কিশমিশ ও কলা খাওয়ার ফলে অনেক তাড়াতাড়ি মোটা হওয়া যায়।
শেষ কথা
উপরের আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানালাম কিশমিশ খেলে মোটা হওয়া যায় কিভাবে। আশা
করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার মনের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন ।এতক্ষণ
মনোযোগ দিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি
উপকৃত হন তাহলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন এবং এরকম
প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন
ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url