নবজাতক শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন ? শিশু জন্মের পর করণীয়

বিয়ের পর সকল নবদম্পতির কিংবা পরিবারের লোকজনের চাওয়া থাকে পরিবারে নতুন সদস্য আসবে এবং সংসার আলোকিত করবে। তবে নবজাতক পৃথিবীতে আসার পর নবজাতকের যত্ন কোনভাবেই যেন কম না হয় সেটি সবাই চায়। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন নবজাতক জন্মের পর করণীয় এবং এক মাসের শিশুর যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত।
নবজাতক জন্মের পর করণীয়

একটি পরিবারের সবটুকু আশা-আকাঙ্ক্ষায় তার নবজাতক সন্তানকে নিয়ে। তাই কেউই চায়না তাদের প্রিয় সন্তানটি অযত্নে বেড়ে উঠুক। নবজাতকের যত্ন থেকে শুরু করে তিন মাসের শিশুর যত্ন সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাবো।

ভুমিকা

একটি নবজাতক শিশুর জন্মের পর পরই তার পরিবারে আনন্দ বয়ে আসে। পরিবারের সকলেই সেই শিশুটিকে দেখে খুশি হয়। তবে সেই খুশির সঙ্গে সে সাথে করে নিয়ে আসে তার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য ও যত্ন। একটি নবজাতক শিশুর যত্ন ও তার মানসিক শারীরিক পরিচর্যা করা তার পরিবারের অর্থাৎ তার পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে ওঠে। 
জন্মের পর পরই একটি শিশুর দেহ মন একদমই নরম এবং স্পর্শকাতর হয়ে থাকে যার ফলে পিতা মাতার তার যত্ন ও তার বিষয়ে সচেতন থেকে তাকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে নবজাতকের যত্ন ও নবজাতক জন্মের পর করণীয় এবং এক মাসে শিশুর যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

নবজাতক জন্মের পর করণীয়

নবজাতকের জন্মের পর পরই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এই লেখাটির প্রথম অংশে এখন আমি আপনাকে জানাবো নবজাতক জন্মের পর করণীয় -

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ বাচ্চা জন্ম হয় মেডিকেলে অথবা ক্লিনিকে। কিন্তু আপনার বাচ্চা যদি বাসায় জন্মগ্রহণ করে থাকে তাহলে অবশ্যই জন্মের পর আপনাকে বাচ্চার গায়ে লেগে থাকা সকল ভেরনিক্স তথা বাচ্চার গায়ে লেগে থাকা সাদা সাদা রংয়ের প্রলেপগুলো তুলে ফেলতে হবে। 
নবজাতক জন্মের পরপরই যদি কান্না করে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে ছেলের শ্বাস প্রশ্বাস সঠিকভাবে চলছে এবং যদি শ্বাস প্রশ্বাস সঠিকভাবে চলে তাহলে আপনার সন্তান সুস্থ্য স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছে। আর যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই কোন ডাক্তার অথবা নিকটস্থ কোনো মেডিকেলে নিয়ে যাইতে হবে। 

আমরা একটি ভুল করে থাকি বাচ্চা জন্ম হওয়ার পরেই বাচ্চাকে তার মায়ের কোলে দেওয়া হয় না কিন্তু যখন আপনি মা হবেন অথবা বাবা হবেন বা পরিবারের যেকোনো আত্মীয় হবেন আপনি এই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন যেন বাচ্চা জন্ম হওয়ার পরপরই তাকে মায়ের কোলে দেওয়া হয়। 

অতঃপর ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বাচ্চার ডান কানে আযান এবং বাম কানে কেমন দিতে হবে। যদি ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের হয়ে থাকে তবে তা ভিন্ন ব্যাপার। আমাদের সমাজে আরেকটি ভুল ধারণা রয়েছে যা হলো নবজাতকের জন্মের পর তার মায়ের প্রথম দুধ তাকে খাইতে দেওয়া হয় না এটাকে শাল দুধ বলা হয়। 

কিন্তু এই শাল দুধে রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেগুলো নবজাতকের যত্ন এবং নবজাতকের সুস্থতা ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটু পরে আমি আপনাকে জানাবো এক মাসের শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন। 
নবজাতক জন্মের পর করণীয়

শিশুর জন্মের পর অবশ্যই নারী কাটার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যেগুলো হলো , যে অস্ত্র দিয়ে কাটা হবে সেটি অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুবীহীন হতে হবে এবং যিনি কাটবেন তাকে অবশ্যই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। 

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম নবজাতক জন্মের পর করণীয় কি এই সম্পর্কে । তিন মাসের শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন তা জানতে হলে আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

নবজাতকের যত্ন

নবজাতকের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই নবজাতককে যত্ন করার কয়েকটি মাধ্যম বা কয়েকটি উপায়।
নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো-

খাওয়ানোঃ নবজাতকের জন্য সবথেকে ভালো খাবার হল তার মায়ের বুকের দুধ। অনেকে এখন বুকের দুধ না খাইয়ে বাচ্চাকে বাজারে কিনতে পাওয়া প্যাকেট জাত দুধ খাওয়াচ্ছে। এ প্যাকেট জাতগুলোতে অনেক ধরনের জৈব উপাদান থাকে যা শিশুদের দেহের ক্ষেত্রে ক্ষতি করতে পারে। 

কিছু ক্ষেত্রে মায়ের দুধ অপর্যাপ্ত হলে বা মায়ের দুধ খাওয়াতে না পারলে মায়ের কোন অসুখ-বিসুখ থাকলে বাচ্চাকে সঠিক ফর্মুলা অনুযায়ী দুধ খাওয়াতে হবে।
নবজাতক কে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাঃ আপনি জানেন যে শিশু ত্বক শিশুর হাড় এবং শরীরের বিভিন্ন মাংস অনেক নরম এবং নমনীয় হয়,এই কারণে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময় যিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করবেন তার অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত যে নবজাতকের যেন কোন ধরনের কোন আঘাত না লাগে। 
আপনি নবজাতককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন আপনি বাজার থেকে নবজাতকের জন্য সাবান শ্যাম্পু লোশন ইত্যাদি কেনার সময় উন্নত মানের এবং ভালো জিনিস কেনার চেষ্টা করবেন নয়তো নয়তো এটি নবজাতকের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।

নবজাতক কে সোয়ানোঃ নবজাতকের বিছানা সুন্দরভাবে নরম তুলা দিয়ে করতে হবে অথবা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় যে সকল ফোমের বিছানা সে সকল বিছানাতে বাচ্চাকে সুন্দর মত সোয়াতে হবে। নবজাতককে দিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নবজাতকের মাথায় একটু নিচে থাকে এবং তার যেন শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়।

অপরিহার্য টিকাঃ বাংলাদেশে বিনামূল্যে বাচ্চাদের অনেক ধরনের অপরিহার্য টিকা গুলো কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। ওই সকল টিকা গুলো নবজাতক কে দেওয়া উচিত যাতে করে নবজাতক বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ নবজাতক শিশু যেহেতু কথা বলতে পারে না সেহেতু তার বিভিন্ন উপশম গুলো দেখে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত যাতে করে সে সুস্থ থাকতে পারে। প্রতি মাসে অন্তত বাচ্চাকে দুইবার বিশেষজ্ঞ শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

পোশাক পরিধানঃ নবজাতকের পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ করে নবজাতকের মাকে এ বিষয়টা একটু বেশি খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে না বলে দাও এর কোন সময় কোনটির পোশাক পরে সে বেশি আরামদায়ক হবে তা খেয়াল রাখা। 
কারণ যেহেতু বাচ্চা বলতে বলতে পারেনা যে আমার এখন গরম লাগছে বা আমার এখন ঠান্ডা লাগছে সেজন্য মাকে বুঝতে হবে এবং আরামদায়ক পোশাক পড়াতে হবে।

মানসিক যত্নঃ যেহেতু এই সময়েই নবজাতক মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে শুরু করে আস্তে আস্তে এর জন্য পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন সকলেই নবজাতকের সাথে সুন্দর ও ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং তাকে আদর করতে হবে এবং তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তুলতে হবে যেন সে তাদের ভালো অনুভূতিগুলোকে সাড়া প্রদান করতে পারে।

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই এক মাসের শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত -

এক মাসের শিশুর যত্ন

এক মাসের শিশুর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সে সম্পর্কে এখন আমি আপনাকে জানাবো এবং একটু পরে তিন মাসের শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন তা সম্পর্কে জানাবো -

এক মাসের শিশুর ক্ষেত্রে প্রথমে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে যেন বাচ্চার শরীরের আকার আকৃতি এবং তার ওজন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। বাচ্চার ওজন এবং আকৃতি এগুলা যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে অবশ্যই তার চোখ এবং নাভি দেখতে হবে যে এগুলা স্বাভাবিক আছে কিনা এবং যদি অস্বাভাবিক থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 
অবশ্যই বাচ্চাকে এর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তার জন্য বাচ্চাকে নিয়মিত ডায়াপার পরিবর্তন করতে হবে এবং অবশ্যই তাকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় নিয়ে। এক মাসের শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন হয় না কারণ তার শরীর অনেক ঠান্ডা থাকে এবং তাকে গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হয়।

এক মাসে অবশ্যই অন্তত দুইবার বাচ্চার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং এক মাসের ভেতরে যে সকল টিকা রয়েছে সে সকল টিকা বাচ্চাকে প্রদান করতে হবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে।এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাচ্ছি কিভাবে নিবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই তিন মাসের শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন -

তিন মাসের শিশুর যত্ন

তিন মাসে একটি শিশুর সংবেদনশীল হওয়া শুরু করে এবং অনেক কিছু বুঝতে পারে এবং তার পিতা-মাতার ডাকে সাড়া দেওয়া শুরু করে এই সময় বাচ্চার সবচেয়ে বেশি যে যত্ন কি দরকার সেটি হল তার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন। 
তিন মাসের শিশুর যত্ন

এ সময় বাচ্চাকে সুন্দরভাবে ডাকতে হবে এবং তাকে আদর করে রাখতে হবে এবং তাকে বুঝাতে হবে যে আপনাদের কাছে সে গুরুত্বপূর্ণ। তিন মাসের মধ্যে যে সকল টিকা থাকবে সেই সকল টিকা গুলো বাচ্চাকে প্রদান করতে হবে। 

অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন বাচ্চা দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমাই। শিশুদের নাক ও চুল বড় হতে থাকে এর জন্য শিশুদের নক ও চুলের যত্ন নিতে হবে।শিশু যদি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বেশি কান্না ঘাটতি করে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 
এই সময় বাচ্চাকে সবচেয়ে বেশি সময় দিন , বাচ্চাকে গান গেয়ে শুনান, বেশি বেশি আদর যত্ন করুন তাহলে তার মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নত হবে।

শেষ কথা

এই আর্টিকেল টিতে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি নবজাতক জন্মের পর করণীয় এবং এক মাসের শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন এই ব্যাপারে বিস্তারিত। আমি আরো অবহিত করেছি তিন মাসের শিশুর যত্ন ও নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে । 

 আশা করি এই সকল তথ্য জেনে আপনি আপনার প্রিয় নবজাতকের যত্নে কোন কমতি রাখবেন না। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করে জানিয়ে দিন এবং এরকম অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url